প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শীতার কারণে দ্রুত ভ্যাকসিন এসেছে : সালমান এফ রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (২৬ জানুয়ারি): বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও সাহসের কারণে বাংলাদেশ এতো দ্রুত ভ্যাকসিন পেয়েছে। সম্প্রতি বাসসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।
দক্ষিণ এশিয়াসহ বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশের কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি দ্রুত শুরু হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে সালমান এফ রহমান বলেন, এটি সম্ভব হয়েছে কেবল প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতা ও সাহসের কারণে। সারা বিশ্বে ভ্যাকসিন নিয়ে হাহাকার। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে (ইইউ) অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ফাইজার জানিয়েছে তারা চুক্তি অনুযায়ী টিকা দিতে পারবে না। কোরিয়া, জাপান, থাইল্যান্ডের মতো দেশ বা পাকিস্তানে কিছু শুরুই হয়নি। অথচ আমরা ত্বরিত গতিতে কেবলমাত্র প্রতীকীভাবে নয়, একেবারে পরিকল্পনামাফিক টিকাদান কর্মসূচি শুরু করছি।
টিকা আমদানির সাথে বেক্সিমকোর সম্পৃক্ততার ব্যাপারে তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন উৎপাদক সেরাম ইন্সটিটিউটে যোগাযোগ করে বললাম যে, আমরা বাংলাদেশে তোমাদের পরিবেশক হতে চাই। তারা প্রথমে অনাগ্রহী ছিল, তবে পরে জানালো, আমাদেরকে তখনই কিছু বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ, তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে হবে। তখন অগ্রীম টাকা বিনিয়োগ করে আমরা পরিবেশক হলাম।
সালমান বলেন, সেরাম বলেছিল প্রথমেই আমাদেরকে টিকা দেওয়া যাবে না। আমরা তখন বললাম, ভারতের সাথে আমাদের এত সুসম্পর্ক। আমাদের দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ভীষণ ভালো সম্পর্ক। আমাদের আগে টিকা দিতে সমস্যা কোথায়! তখন তারা বললো, ভালো সম্পর্কের খাতিরে ভারত সরকার তোমাদের সরকারকে কিছু টিকা হয়তো দেবে।
আমাদের একাধিক বার জোরাজুরির পর সেরাম বললো, একটা উপায় আছে। তোমাদের সরকারের সাথে আমরা চুক্তি করবো যে মাসে ৫০ লাখ করে ৬ মাসে ৩ কোটি ডোজ দেব। কিন্তু টাকাটা এখনই অগ্রীম পরিশোধ করতে হবে। আমরা তখন বললাম, তোমাদের ভ্যাকসিন অনুমোদনই পায়নি, আর এখনই টাকা দিতে হবে? তারা বললো, প্রথম ধাপে নিতে হলে এখনই অগ্রীম দিতে হবে। অন্যথায় সম্ভব নয়। অগত্যা আমরা রাজি হলাম। আমি এরপর প্রধানমন্ত্রীকে জানালাম যে, ৩ কোটি ডোজ প্রথম ধাপে দেয়ার ব্যাপারে আমরা সেরামকে রাজি করিয়েছি। তবে তারা শর্ত দিয়েছে অগ্রীম অর্থ দিতে হবে। তিনি সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলেন।
সালমান জানান, এরপর আমরা প্রথমেই ৬ কোটি ডলার বা অর্ধেক অগ্রীম পরিশোধ করলাম। আর এ কারণেই পৃথিবীর অনেক দেশ যখন টিকাই পাচ্ছে না, আমরা তখন এত সুবিধাজনক অবস্থানে আছি।
ভ্যাকসিন কিনতে বাংলাদেশকে ভারতের চেয়ে প্রায় ৪৭ শতাংশ বেশি দাম দিতে হবে বলে রয়টার্সের রিপোর্ট সম্পর্কে সালমান এফ রহমান বলেন, রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে আমাদের বক্তব্য নেওয়া হয়নি। নিলে এতটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতো না। ভারত ও বাংলাদেশ সমান মূল্যে ভ্যাকসিন কিনবে, এটি চুক্তিতেই আছে। সেরাম একটি মাল্টি-বিলিয়ন ডলার কোম্পানি। তারা বাংলাদেশ সরকারের সাথে চুক্তি করেছে। চুক্তিতে উল্লেখ আছে, ভারত যদি ৪ ডলারের বেশিতে সম্মত হয়, আমরা কিন্তু ৪ ডলারের বেশি পরিশোধ করবো না। কিন্তু ভারত ৪ ডলারের চেয়ে কম দামে কিনলে, আমাদেরও সেই দামে দিতে হবে! এখন ভারত ২০০ রুপি বা ২ দশমিক ৮ ডলারে ভ্যাকসিন কিনবে। আমরা ৪ ডলারের পরিবর্তে ২ দশমিক ৮ ডলার পরিশোধ করবো।
সালমান বলেন, এখন আমাদের সামনে টাকা ফেরত চাওয়া বা পরবর্তীতে সমন্বয় করে নেওয়ার সুযোগ আছে। তবে, প্রধানমন্ত্রী টাকা ফেরত বা মূল্য সমন্বয়ের পরিবর্তে উদ্বৃত্ত অর্থে আমাদেরকে আরও ভ্যাকসিন নিতে বলেছেন। অর্থাৎ আমরা একই টাকায় ৩ কোটির পরিবর্তে ৪ কোটি বা তারও বেশি টিকা পেতে পারি।
প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের টিকা লাগবে অনেক বেশি! আর সেরাম থেকে আমরা যেই পরিমাণে আনছি, এই পরিমাণ অন্য কোনো কোম্পানি দিতে পারছে না। নিজের দেশকেই তারা দিতে পারছে না! পাকিস্তান চীনের খুব ভালো বন্ধু, কিন্তু চীন নিজস্ব ভ্যাকসিনের মাত্র ৫ লাখ ডোজ পাকিস্তানকে উপহার দিয়েছে। বাকিটা কিনতে হবে, কিন্তু কখন সরবরাহ হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। ব্রাজিল, ভারতে বিমান পাঠাতে চেয়েও লাভ হয়নি। ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ড সেরামের এই টিকা ৭ ডলারের উপরে কিনছে, তারপরও এখন পাবে না; পাবে জুনে! ভারতের পর বাংলাদেশ ছাড়া কেউই ৫ ডলারের নিচে টিকা পায়নি, আর প্রথম ধাপে তো নয়ই। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, জানুয়ারির ২৫ তারিখের মধ্যে বিশ্বের কোনো কোম্পানি আমাদের ৫০ লাখ টিকা দিতে পারতো না।
আর দামের ইস্যুতো আছেই। ফাইজার ও মডার্না তো বটেই, চীন ও রাশিয়ার ভ্যাকসিনের দামও সেরামের ভ্যাকসিনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।