অপরিবর্তিত সিপিআই স্কোর নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই: ড. ইফতেখারুজ্জামান
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (২৮ জানুয়ারি): ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দুর্নীতির ধারণা সূচকে (সিপিআই) বাংলাদেশের স্কোর তৃতীয়বারের মত অপরিবর্তিত রয়েছে। আপাততঃ এটি স্বস্তিকর মনে হলেও এ নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই।
বৃহস্পতিবার সিপিআই ২০২০ এর বৈশ্বিক প্রকাশ উপলক্ষে অনলাইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সূচকে বাংলাদেশের স্কোর তৃতীয়বারের মত অপরিবর্তিত রয়েছে, আপাততঃ এটি স্বস্তিকর মনে হলেও নিম্নক্রম অনুসারে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে থাকা সোমালিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম অবস্থানে থাকা আফগানিস্তানের মত দেশেরও স্কোর ৩ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে; তাই বাংলাদেশের অপরিবর্তিত স্কোর নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। ২০২০ সালে ০-১০০ স্কেলে গত দুই বছরের মতই ২৬ স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ১৮০টি দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন থেকে গণনা অনুযায়ী ২০১৯ এর তুলনায় ২ ধাপ অবনতি হয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১২তম। তবে সর্বোচ্চ থেকে গণনা অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত থেকে ১৪৬তম। এবার একই স্কোর পেয়ে নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে ১২তম অবস্থানে আছে উজবেকিস্তান ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক।”
টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, “বাংলাদেশের স্কোর অপরিবর্তিত থাকলেও তা বৈশ্বিক গড় ৪৩ এর চেয়ে অনেক কম এবং দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখনও দ্বিতীয় সর্বনিম্ন আর এশিয়া প্যাসিফিকের ৩১টি দেশের মধ্যে অবস্থান চতুর্থ সর্বনিম্ন, যা বিব্রতকর ও হতাশাব্যাঞ্জক। আমাদের আরো ভালো করার সামর্থ্য ছিল; যদি রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা যেতো এবং ক্ষেত্র বিশেষে দুর্নীতির ঘটনা অস্বীকার কিংবা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা না করে অবস্থান ও পরিচয় নির্বিশেষে আইনের কঠোর প্রয়োগ হতো তাহলে আমাদের স্কোর ও অবস্থানে আরো উন্নতি হতে পারতো।”
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, “রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অপরাধের সাথে রাজনৈতিক যোগসূত্রতা; গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের অবস্থান এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়া; আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ, জালিয়াতি এবং সরকারি কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি হয়নি। তাই এসব পরিস্থিতির পরিবর্তন করে কোন ধরণের ভয়ভীতি কিংবা অনুকম্পার উর্ধ্বে উঠে প্রধানমন্ত্রীর ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুন্য সহশীলতা’র ঘোষণা যথাযথ বাস্তবায়ন করা গেলে সূচকে বাংলাদেশের স্কোর আরো ভালো হতে পারতো।”
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “দুদক দুর্নীতিবাজদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার চেষ্টা করছে, কিন্তু তা একটি সীমারেখার মধ্যে। রাঘববোয়ালদের আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে দুদকের সক্রিয় ভূমিকার ঘাটতি রয়েছে। তাই সর্বোচ্চ রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির পরও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুন্য সহনশীলতা অকার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে। এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ এমনভাবে রাজনীতিকিকরণ হচ্ছে যাতে সেগুলোকে এখন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলে মনে হচ্ছে, এগুলো ঢেলে সাজানো দরকার। সূচকে এসবের প্রভাব পড়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, সিপিআই সম্পর্কে যথাযথ ধারণার অভাবে অনেক সময় ‘বাংলাদেশ দুর্নীতিগ্রস্ত বা বাংলাদেশের অধিবাসীরা সবাই দুর্নীতি করে’ এ ধরনের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়। যদিও দুর্নীতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ- সর্বোপরি, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের পথে কঠিনতম অন্তরায়, তথাপি বাস্তবে দেশের আপামর জনগণ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। তারা দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী মাত্র। ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি এবং তা প্রতিরোধে দেশের নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যর্থতার কারণে দেশ বা জনগণকে কোনোভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত বলা যাবে না।
উল্লেখ্য, সিপিআই সূচকে দুর্নীতির ধারণার মাত্রাকে ০-১০০ এর স্কেলে নির্ধারণ করা হয়। ‘০’ স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত এবং এবং ‘১০০’ স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত বা সর্বাধিক সুশাসিত বলে ধারণা করা হয়। যে দেশগুলো সূচকে অন্তর্ভুক্ত নয় তাদের সম্পর্কে এ সূচকে কোনো মন্তব্য করা হয় না। সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোনো দেশই এখন পর্যন্ত সিপিআই-এ শতভাগ স্কোর পায়নি। অর্থাৎ, দুর্নীতির ব্যাপকতা সর্বনিম্ন- এমন দেশগুলোতেও কম মাত্রায় হলেও দুর্নীতি বিরাজ করে।
টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার উপদেষ্টা- নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের।