‘পদত্যাগ’ করতে প্রস্তুত মাহবুব তালুকদার
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার
ঢাকা(১৫ ফেব্রুয়ারি): যেকোন সময় পদত্যাগ করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সহকর্মীদের সঙ্গে ভিন্নমতের জন্য আলোচিত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, দেশের ভালোর জন্য তার পদত্যাগ করতে কোনো সমস্যা নেই।
কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদের চার বছর পার করার পর দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে ৪২ জন নাগরিকের দাবির প্রতিক্রিয়ায় তিনি একথা বলেন।
সোমবার বিকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে নিজ কার্যালয়ে ‘ইসির পঞ্চম বর্ষের প্রারম্ভে আমার বক্তব্য’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা জানান। এসময় তিনি লিখিত বক্তব্যের পাশাপাশি উপস্থিত সাংবাদিকদের চারটি প্রশ্নের উত্তর দেন।
৪২ নাগরিক বর্তমান ইসি সদস্যদের পদত্যাগ দাবি করেছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে মাহবুব তালুকদার বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে পদত্যাগ করলে যদি লাভ হয়, দেশের যদি কোনো উপকার হয়, তাহলে আমি যে কোনো মুহূর্তেই পদত্যাগ করতে প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটি প্রসেসের মধ্যদিয়ে নির্বাচন কমিশনার নির্বাচিত হয়েছি। এখন যদি আমাদের বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয়, সেক্ষেত্রে আমাদেও কোনও বক্তব্য নেই। আর একটা প্রসেসের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পরে আমি পদত্যাগ কওে ফেললাম, তা কোনও বিষয় হয় না।
মাহবুব তালুকদার বলেন,এই দাবিটা সম্ভবত আমাদের কাছে নয়, এটা অন্যত্র দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে একটা কথা আছে। আমি এই পর্যন্ত তিনবার পদত্যাগের অনুরোধ পেয়েছি। এখন কতবার পদত্যাগ করব? সেটাও একটা প্রশ্ন।
নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের সুপারিশ করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সুপারিশ আমাদের ওপর নির্ভর করে না। নির্বাচন কমিশন যারা তৈরি করেন বা সংশ্লিষ্ট থাকেন তারা এ সুপারিশ করতে পারেন।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আজ চার বছর পূর্ণ হলো। পেছনের দিকে তাকিয়ে মনে হয় আমাদের আতœবিশ্লেষণ প্রয়োজন। প্রায় সব নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে আমরা তৃপ্তি বোধ করি। কিন্তু নির্বাচন বিষয়ে আমাদের সব দাবি জনগণের উপলব্ধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কেবল রাজনৈতিক দল নয়, নীরব জনগোষ্ঠীর অশ্রুত ভাষা শ্রবণের প্রচেষ্টা থাকা প্রয়োজন।
বর্তমানে নির্বাচন এককেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে ইসির এ কমিশনার বলেন, এককেন্দ্রিক নির্বাচন বহুদলীয় গণতন্ত্রের উপাদান হতে পারে না। যেহেতু নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না, সেহেতু নির্বাচনের প্রতিটি আইনকানুন ও আচরণবিধি কঠোরভাবে পালনের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্রকে পরিপালন ও সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়া যথাযোগ্য সংস্কার না করার কারণে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা এখন গভীর খাদের কিনারে। এই সংস্কার নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করে না। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলো এবং সংশ্লিষ্ট সবার সমঝোতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখে আমার ধারণা হচ্ছে নির্বাচন নির্বাসনে যেতে চায়। নির্বাচন অর্থ অনেকের মধ্য থেকে ভোটের মাধ্যমে বাছাই। কিন্তু সে অবস্থা আজকাল পরিলক্ষিত হয় না।প্রশ্ন জাগে, নির্বাচন কি এখন পূর্বে নির্ধারিত? নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য না হলে, কোনও বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র আপন মহিমায় বিকশিত হতে পারে না।
আগামী মে মাস থেকে ইউনিয়ন পরিষদ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলীয় প্রতীকে ব্যাপক পরিসরে কয়েক ধাপে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনেও সহিংসতার আশঙ্কা করি। আচরণবিধি লঙ্ঘন ও হানাহানি বর্তমানে নির্বাচনের অনুসঙ্গ হয়ে গেছে। কোনও অনভিপ্রেত ঘটনাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মিলে একটি অবিচ্ছিন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাই প্রাণহানির অভিশাপ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার পথ অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের উদ্যোগ কেন কার্যকর হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক।
তিনি বলেন, এককেন্দ্রিক নির্বাচন বহুদলীয় গণতন্ত্রের উপাদান হতে পারে না। যেহেতু নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না, সেহেতু নির্বাচনের প্রতিটি আইনকানুন ও আচরণবিধি কঠোরভাবে পালনের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্রকে পরিপালন ও সংরক্ষণ করতে হয়।
তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কার্যকালের শেষ বর্ষের প্রারম্ভে দাঁড়িয়ে একজন আশাবাদী মানুষ হিসেবে- যার শেষ ভালো তার সব ভালো, এই প্রবাদবাক্যটিকে কি আশ্রয় করতে পারি?