কারো মৃত্যু কাম্য নয়: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
গণভবনে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা (২৭ ফেব্রুয়ারি): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারো মৃত্যু কাম্য নয়। এ নিয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টিও কাম্য নয়। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্বও আমাদের।
শনিবার বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সরকারের সমালোচনার প্রশ্নে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতির কারণে আমাদের দেশের ছোট শিশু থেকে শুরু করে পরিণত বয়সের কেউ যেন বিপথে যেতে না পারে। তারা যেন কোন ধরণের ক্ষতিকর দেশ বিরোধী কাজে জড়িত হতে না পারে। সেজন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়া একান্ত অপরিহার্য।
ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, সমালোচনা যারা করছে তারা করবেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৩ নভেম্বর জেলখানায় চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। তেমন কোন ঘটনা বাংলাদেশে এখনও ঘটেনি। কেউ অসুস্থ হলে, মারা গেলে কী আর করার আছে?
প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে প্রায় এক বছর পর আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। তবুও সরাসরি নয়, ভার্চুয়ালি। আজ অবশ্য আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি বাংলাদেশের একটি মহৎ এবং গৌরবোজ্জ্বল অর্জনের সুসংবাদ দেওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, এক যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ গতকাল (শুক্রবার রাতে) স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেছি। সমগ্র জাতির জন্য এটা অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের। আমাদের এই উত্তরণ এমন এক সময়ে ঘটলো, যখন আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি; আমরা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ কৃতিত্ব এ দেশের আপামর জনসাধারণের। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ একটি প্রত্যয়ী ও মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে জায়গা করে নেবে। আমাদের এ অর্জনকে সুসংহত এবং টেকসই করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের জন্য এটি একটি বিশেষ ধাপ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার। অর্থাৎ মানদণ্ডের চেয়ে প্রায় ১ দশমিক ৭ গুণ। মানবসম্পদ সূচকে নির্ধারিত মানদণ্ড ৬৬-এর বিপরীতে বাংলাদেশের অর্জন ৭৫.৪। অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকে উত্তরণের জন্য মানদণ্ড নির্ধারিত ছিল ৩২ বা তার কম। কিন্তু ওই সময়ে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২৭।
শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেন, উন্নয়নের চলমান গতিধারা বজায় থাকলে বাংলাদেশ অচিরেই উন্নত দেশের কাতারে উঠবে। আমাদের এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ অচিরেই একটি উন্নত-সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
আল জাজিরায় প্রচারিত বহুল আলোচিত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে বলার কিছু নেই। একটি চ্যানেল কি বলছে জনগণই তা বিচার করবে। তিনি বলেন, প্রতি পদে সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়া খুব সহজ নয়।
বক্তব্য শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের সুপারিশপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন ।