বিশ্বে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করবে সিএনএন

ঢাকা (০৯ মার্চ): যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ২৪ ঘন্টার সংবাদ মাধ্যম বা চ্যানেল ক্যাবল নিউজ নেটওর্য়াক (সিএনএন) আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করবে। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রনালয় সিএনএন’র সঙ্গে একটি অংশীদারিত্ব চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছে। এরইমধ্যে বিষয়টি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাণিজ্য সচিব স্বাক্ষরিত একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উবর্ধতন কর্মকর্তা জানান। 

ওই কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে প্রস্তাবিত কাজটি তত্ত্বাবধান ও বাস্তবায়ন করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনষ্টিটিউট (বিএফটিআই)। এজন্য সিএনএন’র সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। আর এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন সংশ্লিষ্ট সেক্টরের শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্বাহ করা হবে। 

এ বিষয়ে কথা বলতে বাণিজ্য সচিব ড. মো: জাফর উদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। 

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান,গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সক্ষমতার চিত্র বিশ্বব্যাপী  প্রচারের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব দেয়। সিএনএন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী  ‘মুজিববর্ষ’ এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি বা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকে বিবেচনায় নিয়ে এই প্রস্তাব দেয়। 

ওই কর্মকর্তা জানান, ২০২১ সাল আমাদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব বর্ষ পালন করা হচ্ছে। যে কারণে আন্তজার্তিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও উন্নয়নের চিত্র প্রচার করা প্রয়োজন। 

প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়, বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবির পঞ্চম দফায় বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য কাঠামো নীতির কথা তুলে ধরেছেন। ব্যবসা- বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধনের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের কারিগর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার। 

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের গতিশীল ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিগত কয়েক বছরে বিশ্ব দরবারে অর্থনৈতিকভাবে, বিশেষ করে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি লাভ করেছে। সরকারের প্রতিশ্রুত ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ইতিমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি) অর্জন, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের সমৃদ্ধশালী মর্যাদাশীল দেশ হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। 

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনীতি ও সামগ্রিক বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাবের সম্ভাবনা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে এই মহামারী মোকাবেলা করে যাচ্ছে। 

এছাড়া ২০২৬ সালের পর এলডিসি থেকে উন্নতি হবার প্রেক্ষিতে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক ও কোটা মুক্ত সুবিধা প্রত্যাহার হলে বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কমতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 

তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে বাংলাদেশের কৃষি খাতে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি অর্থনীতিতে আরো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিশ্লেষকরা আশংকা করেছেন। এই অবস্থায় এই সকল প্রতিবন্ধকতাসমূহ সফলতার সঙ্গে উত্তরণের জন্য বাণিজ্যের প্রসারে সরকারের চলমান গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ডসমূহ, মানসম্মত পণ্য ও সেবা, দক্ষ মানবশক্তি এবং বাংলাদেশের সক্ষমতার বিষয়টি বিশ্বদরবারে সঠিক ভাবে প্রচার করা জরুরি। 

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্রমবর্ধমান শিল্প-বাণিজ্য খাতের বিকাশ/বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা, সরকারের সাফল্য প্রচার ও প্রসারের জন্য মার্চ মাসে সিএনএন-এ প্রোমো অডিও ভিজ্যুয়াল সম্প্রচারের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় শিল্প বাণিজ্য খাতের এবং সংশ্লিষ্ট শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্জনসমূহ বিশ্বব্যাপী সিএনএন’র দর্শক- শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে আন্তজার্তিক বাজারে বাংলাদেশের বাণিজ্যেও সম্প্রসারণ ঘটবে, বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের সামষ্টিক অর্জনে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।