আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন ড. ইউনূস
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ড. ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (১৬ মার্চ): নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ দুইজন হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। আদালতের আদেশ অমান্য করে নিজ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগে ক্ষমা চাইলে তাদেরকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন উচ্চ আদালত।
গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পুনর্নিয়োগের বিষয়ে জারি করা রুলটি শুনানির জন্য ২২ এপ্রিল নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুকন উদ্দিন মাহমুদ, ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নওরোজ মোঃ. রাসেল চৌধুরী। কর্মচারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোঃ. ইউসুফ আলী। তার সঙ্গে ছিলেন আবেদনকারী আইনজীবী মোঃ. উজ্জ্বল হোসেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আদালতের আদেশ অমান্য করে নিজ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ টেলিকমের এক পরিচালকসহ দুইজনকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। তলবের পরিপ্রেক্ষিতে আজ তারা হাইকোর্টের ভার্চুয়ালি আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
আদালত অবমাননার শুনানির ধার্য দিনে তাদের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুকন উদ্দিন মাহমুদ আদালতকে জানান, ‘করোনার বৈশ্বিক মহামারির কারণে গ্রামীণের ভার্চুয়াল অফিস চলছিল। তাই তাদেরকে এখনো নিয়োগ দেয়া যায়নি। আমরা এর ব্যাখ্যা দেবো।’
৩৮ জন কর্মচারীকে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ বাস্তবায়ন না করায় গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ. কামরুজ্জামানের করা আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারির আদেশে তাদেরকে হাইকোর্টে তলব করা হয়েছিল। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট একই বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদেশে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ. আশরাফুল হাসানকে আদালতে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। আদেশে বলা হয়, গত ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট পিটিশনারদের চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য আদেশ দিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হিসেবে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও মোহাম্মদ আশরাফুল হাসান সেই আদেশ অনুসরণ করেননি।
তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হলে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হয়েছে। রুলে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করায় তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে সেই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এক নোটিশে গত বছরের ২৫ অক্টোবর মোঃ. কামরুজ্জামানসহ গ্রামীণ টেলিকমের ৯৯ জন কর্মচারীকে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএর সঙ্গে আলোচনা না করেই চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুল হাসান স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে এই ছাঁটাই করা হয়েছিল।
এ নিয়ে হাইকোর্টে ৩৮টি রিট আবেদন করা হলে হাইকোর্ট গত বছরের ৬ ডিসেম্বর এক আদেশে তাদের চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি তাদের চাকরি থেকে অপসারণের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। এই আদেশের পরও তাদেরকে চাকরিতে পুনর্বহাল না করলে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার আবেদন করেন মোঃ. কামরুজ্জামান।
সেটির শুনানির জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসানকে তলব করা হয়। মঙ্গলবার তাদের ভার্চুয়ালি হাজির হয়ে চাকরিচ্যুত ৩৮ জনকে পুনর্বহাল না করার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।