নারীরা সমবায়ে এগিয়ে এলে দুর্নীতি কমবে: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: ফাইল ফটো
ঢাকা (৭ নভেম্বর): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমবায়ে নারীরা বেশি করে এগিয়ে এলে দুর্নীতি কমবে এবং কাজ বেশি হবে। এতে প্রতিটি পরিবার উপকৃত হবে। শনিবার সকালে ‘৪৯তম জাতীয় সমবায় দিবস ২০২০’ ও ‘জাতীয় সমবায় পুরস্কার ২০১৯ প্রদান’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অংশ নেন। খবর বাসস।
সমবায় কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমাজের অর্ধেকই নারী। তারা যদি সমবায়ে বেশি করে এগিয়ে আসেন, তাহলে দুর্নীতি কমবে। কাজ বেশি হবে। প্রত্যেক পরিবার উপকৃত হবে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সমবায় সমিতির মোট সদস্যের মধ্যে মাত্র ২৩ শতাংশ নারী। এই কার্যক্রমে বেশি করে নারীদের এগিয়ে আসা উচিত।’
দেশ থেকে দারিদ্র্য নির্মূলে বহুমুখী গ্রাম সমবায় সমিতি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘যদি বহুমুখী গ্রাম সমবায় গড়ে তুলতে পারি, তাহলে দেশে কোনো দারিদ্র থাকবে না। এর মাধ্যমে দারিদ্র সম্পূর্ণ নির্মূল হবে।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাধ্যতামূলক বহুমুখী সমবায়ের কথা বলেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা জানতেন, কিভাবে বাংলাদেশের উন্নতি হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের প্রচেষ্টায় সমবায় সমিতি ও সমবায়ীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে সমিতির সংখ্যা ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৩৪টি। আর সদস্য সংখ্যা ১ কোটি ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭৪৭ জনে উন্নীত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি আমার খামারের সাথে সাথে আমরা প্রত্যেকটি দরিদ্র পরিবারকে আত্মনির্ভরশীর করে গড়ে তুলতে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক করে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে’র মাধ্যমে ছিন্নমূল মানুষদেরকে গৃহ ও ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে। জুন ২০২০ পর্যন্ত ২ লাখ ৯৮ হাজার ২৪৯টি পরিবার পুনর্বাসিত হয়েছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪৭০টি আশ্রয়ণ সমবায় সমিতি নিবন্ধিত হয়েছে, যার সদস্য ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৮২ জন। আমরা সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি (সিভিডিপি) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এ প্রকল্পের আওতায় সমবায়ভুক্ত সদস্যদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী সরকারের আরো উন্নয়মমুখী এবং সাধারণ জনগণের জন্য নেয়া পদক্ষেপের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমরা ‘সমবায় ভিত্তিক দুগ্ধ উৎপাদন নিশ্চিতকরণ প্রকল্প’ এবং ‘দুগ্ধ সমবায়ের কার্যক্রম বিস্তৃতকরণের মাধ্যমে বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল ও খুলনা জেলার দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করেছি। মিল্কভিটার মাধ্যমে সিরাজগঞ্জে দুগ্ধ কারখানায় গো-খাদ্য উৎপাদন, গুড়োঁ দুধ উৎপাদন কারখানা এবং মহিষের কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করেছি। তিনি বলেন, চরাঞ্চলগুলোতে বা উপকুলীয় অঞ্চলগুলোতে ভেড়া এবং মহিষ ভালভাবে লালন-পালন করা যেতে পারে, যেটা লাভজনক হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চট্টগ্রামের পটিয়ায় দুগ্ধ কারখানা স্থাপন’ এবং ‘বৃহত্তর ফরিদপুরের চরাঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও দুগ্ধের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতকরণ কারখানা স্থাপন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। ‘একটানা প্রায় বার বছর আমাদের সরকারের গৃহীত নানাবিধ উদ্যোগের ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের পল্লী এলাকায় অনেক দৃশ্যমান পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।’
দেশের সমবায় খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রচারিত হয়। এসময় সমবায় অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত ‘সমবায়ের সাফল্য গাঁথা’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এবং প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য সমবায় পুরস্কার ২০১৯ বিজয়ীদের মাঝে বিতরণ করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল আহসান স্বাগত বক্তৃতা করেন। সমবায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো আমিনুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ইউনিয়নের সভাপতি শেখ নাদির হোসেন লিপু মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।