ডেঙ্গু: তাপসের বক্তব্যে ‘হতভম্ভ’ সাঈদ খোকনের ‘খোঁচা’
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

সংগৃহিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: ডেঙ্গু পরিস্থিতির ‘উন্নতির দাবি’ নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপসের বক্তব্যে ‘দেশবাসী হতভম্ভ’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মেয়র ও ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য সাঈদ খোকন।
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো দেশে এক লাখ ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের সময় মেয়র ছিলেন খোকন, আর ২০২৩ সালে তিন লাখের বেশি রোগী শনাক্তের বছরে মেয়র তাপস।
গত বুধবার তাপস দাবি করেন, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ঢাকায় ডেঙ্গু রোগী কমেছে। গতকাল শনিবার মিট দ্য প্রেসে সাংবাদিকদের ডেকে খোকন বলেন, ‘বর্তমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ২০১৯-এর তুলনায় ২০২৩ সালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪১ হাজার কম। আমি ভদ্রতার জন্য কারও নাম উল্লেখ করছি না। তবে এ ধরনের অপপ্রচার করা হলে আমি কষ্ট পাই, ব্যথিত হই।’
মিট দ্য প্রেসে মেয়র তাপসের নাম উল্লেখ না করেই তাকে উদ্দেশ করে ‘খোঁচা’ দেন খোকন। আবার বলেন, ‘আমরা একে অপরকে দোষারোপ না করি।’ পরে বলেন, ‘উনি (মেয়র তাপস) আমাদের দলীয় সমর্থনে একজন নির্বাচিত মেয়র। আমি এই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, আমি আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য, আমার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পাবলিকলি আমি যে কোনো বক্তব্য দিতে পারি না, আমার জবাবদিহিতা রয়েছে।’
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘এগিয়ে ছিল দক্ষিণ ঢাকা, স্মৃতির পাতায় ফিরে দেখা’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেসে আসেন ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র খোকন, যার মেয়াদ শেষে ২০২০ সালে ১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় তাপসকে।
এরপর থেকে খোকন ও তাপসের মধ্যে পাল্টাপাল্টি চলছে। খোকনের আমলে নানা ‘অনিয়ম ও ব্যর্থতার’ অভিযোগ বেশ কয়েকবার বক্তব্য রেখেছেন তাপস। খোকনও একাধিকবার পাল্টা অভিযোগ করেছেন।
এর মধ্যে বুধবার তাপস ঢাকার মালিবাগ মোড় সংলগ্ন উড়ালসেতুর নিচে একটি গণশৌচাগার উদ্বোধন করতে এসে খোকন মেয়র থাকাকালে ২০১৯ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবং তার আমলে ২০২৩ সালের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে খোকনের নাম বা তার আমলের কথা উল্লেখ না করে কেবল তাপসের বক্তব্য লেখা হয়।
এতে লেখা, ‘মেয়র তাপস বলেন, ২০১৯ সালে ঢাকা শহরে ১ লাখ ৫৫ হাজার ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত বছর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল যে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ২০১৯ সালকেও ছাড়িয়ে যাবে। আমরা যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সফলতার সঙ্গে এডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি বলেই ২০২৩ সালে উত্তর ও দক্ষিণ মিলিয়ে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগী ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার। সুতরাং ২০১৯-এর তুলনায় ২০২৩ সালে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪২ হাজার কম ছিল। এ বছরও সবার সহযোগিতায় ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব, ইনশাআল্লাহ।’
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। এদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটির রোগী ছিলেন ৫১ হাজার ৭৬২ জন।
সে বছর সারাদেশে ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছিলেন ১৭৯ জন। ঢাকায় কতজন মারা গিয়েছিলেন, আলাদা করে সেই তথ্য নেই।
চার বছর পর ২০২৩ সাল হয়ে উঠে ভয়ংকর। সেবার সারাদেশে রেকর্ড ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ রোগী শনাক্ত হন। এদের মধ্যে ঢাকার ছিলেন ১ লাখ ১০ হাজার ৮ জন। অর্থাৎ ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ঢাকায় রোগী ছিল দ্বিগুণের বেশি।
মৃত্যুর দিক দিয়েও ২০২৩ সাল ছিল বেদনাবিধুর। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সরকারি হিসাবে সারাদেশে ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয় ওই বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। ঢাকায় সংখ্যাটি ছিল ৯৮০। অর্থাৎ ২০১৯ সালে সারাদেশে ডেঙ্গুতে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, ২০২৩ সালে তার পাঁচগুণ মারা যায় কেবল ঢাকা শহরে।
সাঈদ খোকন বলেন, ‘২০১৯ সালে যখন আমি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে ছিলাম, তখন ডেঙ্গুর সূচনা হয় এবং পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। আমার চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না, আমি চেষ্টা করে গেছি, দিন-রাত পরিশ্রম করে গেছি, আমার এই হাজার চেষ্টার পরেও আক্রান্তের সংখ্যা সারাদেশে এক লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ১৫৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে; এতে আমি অত্যন্ত ব্যথিত ছিলাম।
২০২৩ সালে ডেঙ্গুর বিস্তারের সময় তাপসের বিদেশ যাওয়া নিয়ে কথা বলেন খোকন। তিনি ২০১৯ সালের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘আমি চেষ্টা না করে কিন্তু বিদেশে চলে যাইনি। আমি জনগণের সঙ্গে ছিলাম। আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, আমি অসুস্থতাকে গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু আমি খুব দুঃখ পেলাম, খুব কষ্ট পেলাম এই দুই-তিন দিন পূর্বে, বর্তমান যে কর্তৃপক্ষ (মেয়র তাপস), তিনি বললেন, ‘২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ হাজার কম ছিল। আমি কষ্ট পেয়েছি, নগরবাসী হতভম্ভ হয়েছে, নগরবাসী অবাক হয়েছে। আমরা গত বছর দেখেছি, সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখের অধিক ছিল এবং সারাদেশে মৃতের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭০৫ জন, এটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, যা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত।’
এখনও ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হয়নি। তার আগেই চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৬ মে আক্রান্ত ২ হাজার ৫৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত এবং ৩২ জনের মৃত্যুর কথা তুলে ধরে তাপস বলেন, ‘এখনও কিন্তু মৌসুম শুরু হয়নি। গতকালকেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এর আগে বুধবার দিন তিনজন মারা গেছে। তারাও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।’