Notice: Undefined index: HTTP_REFERER in /mnt/volume_sgp1_04/busine23n9s5der/public_html/common/config.php on line 2

Notice: Undefined index: HTTP_ACCEPT_LANGUAGE in /mnt/volume_sgp1_04/busine23n9s5der/public_html/common/config.php on line 14
প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য বাস্তবসম্মত নয়: সানেম

রোববার

২২ ডিসেম্বর ২০২৪


৮ পৌষ ১৪৩১,

২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য বাস্তবসম্মত নয়: সানেম

নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ৮ জুন ২০২৪   আপডেট: ২২:৪০, ৮ জুন ২০২৪
প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য বাস্তবসম্মত নয়: সানেম

সংগৃহিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচকই নেতিবাচক। টানা প্রায় দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে বাংলাদেশ। ধারাবাহিকভাবে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সাড়ে ছয় শতাংশ মূল্যস্ফীতি প্রাক্কলন করা হয়েছে। আবার অর্থনীতিতে বর্তমানে নানা সংকট বিরাজমান। ডলার সংকটে আমদানি সংকুচিত করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ভোগেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে এই মুহূর্তে উচ্চ প্রবৃদ্ধির তুলনায় সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ওপর বেশি জোর দেয়া উচিত ছিল। তা না করে এবারও ছয় দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের উচ্চাবিলাসী লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ধরনের লক্ষ্যমাতা বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)।

প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সানেম এসব কথা বলেছে। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে গবেষণা সংস্থাটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটের আকার আরও ছোট করার পাশাপাশি দরিদ্রদের জন্য বিশেষ বরাদ্দের সুপারিশ করেছে। তারা জানিয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের ওপর চাপ আরও বেড়ে যাবে। এছাড়া বাজেটের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করে সানেম।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথে ফিরছে না। সময়মতো সংস্কার না হওয়ায় অর্থনীতির ভিত্তিগুলো ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। এজন্য বৈশ্বিক ধাক্কার ধকল সইতে পারছে না। এ বাস্তবতায় অর্থনীতি সঠিক পথে ফেরাতে ব্যাংক ও রাজস্ব খাতে দ্রুত সংস্কার শুরু করতে হবে; সংস্কার না হলে অর্থনীতি সঠিক পথে ফিরবে না। সে জন্য সংস্কারের পথনকশা প্রণয়ন করে দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘অর্থনীতিতে যে সমস্যা চলছে, তা বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে কি না; যে ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা কাজে দেবে কি না ও কী করা যেত, এ নিয়ে আমরা আলোচনা করব।’

সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক সায়েমা হক মূল বক্তব্য পেশ করেন। তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন সমস্যা বিদ্যমান। মোটাদাগে বলতে গেলে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও রিজার্ভের ক্ষয় এখন বড় বিষয়। সে জন্য বাজেটের আকার ছোট করা হয়েছে, কিছু পণ্যের উৎস কর কমানো হয়েছে ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হয়েছে। এটা ভালো দিক। এর সুফল কিছু জনগণ পাবে। তবে সাড়ে ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচ্চাকাক্সক্ষী। এটি অর্জন করতে হলে বাজেট ছোট করার পাশাপাশি আরও উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন ছিল, কিন্তু বাজেটে সে ধরনের কিছু নেই।

সায়েমা হক আরও বলেন, করহার বাড়ানোর দিকে যতটা নজর দেয়া হয়েছে, করের আওতা বাড়ানোর দিকে সেভাবে নজর দেয়া হয়নি। মধ্যবিত্তকে স্বস্তি দেয়ার বদলে অস্বস্তি দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো এমনিতে তারল্যসংকটে আছে, ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যাংকঋণ নেয়া সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ধার দিলে (ছাপিয়ে) মূল্যস্ফীতিতে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ডলারের সংকট ও রিজার্ভ নিয়ে সায়েমা হক বলেন, আগের মতো প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এক ডলারের নানা রকম দর যত দিন থাকবে, তত দিন হুন্ডি থাকবেই। পাশাপাশি কালোটাকা উপার্জন বন্ধ না করলে হুন্ডি চলতে থাকবে। প্রণোদনা দিয়ে সাময়িকভাবে প্রবাসী আয় বাড়লেও দীর্ঘ মেয়াদে এ সমস্যার সমাধান হবে না। আর্থিক খাত নিয়ে সায়েমা হক বিদিশা বলেন, ব্যাংকগুলো তারল্যসংকটে ভুগছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে চলছে; কিন্তু ব্যাংক খাত সংস্কারে কোনো পদক্ষেপ বাজেটে দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘এত উদ্যোগের পরও বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি কমছে না। ৬-৯ সুদহার ছিল ভুল নীতি। যাদের টাকার প্রয়োজন ছিল, তারা কম সুদে ঋণ নিয়ে খরচ করেছেন। এখন সুদহার বাড়ানো হয়েছে। চাপে পড়া মানুষ ইতোমধ্যে সেই সংকটে অনেকটা মানিয়ে নিয়েছেন। ফলে সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি কমানো যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় অনেক মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। যথাসময়ে যথাযথ নীতি না নেয়ায় এই অবস্থা হয়েছে।’

সেলিম রায়হান বলেন, ‘করোনার আগে অর্থনীতি ভালো অবস্থায় ছিল। সে সময় ছিল অর্থনৈতিক সংস্কারের সুবর্ণ সময়। কিন্তু সবার তাগাদা সত্ত্বেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধকল আমাদের অর্থনীতি নিতে পারেনি। সংস্কার না হওয়ায় আমাদের অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত অবস্থায় নেই। বাংলাদেশের মতো ভিয়েতনামও একই রকম ধাক্কা খেয়েছিল; কিন্তু তাদের অর্থনীতি ধাক্কা সামলে নিতে পেরেছে।’

এখনই ব্যাংক ও রাজস্ব খাত সংস্কারের পথনকশা প্রণয়ন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন সেলিম রায়হান। ব্যাংক খাতে সুশাসনের ঘাটতি ও খেলাপি ঋণের সমস্যা বড় আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে প্রভাবশালী ও ধনীরা কর দিচ্ছেন না বা নানা রকম ছাড় পাচ্ছেন। সংস্কার না হলে সহজেই সঠিক পথে উঠতে পারবে না দেশের অর্থনীতি। মনে হচ্ছে, সংস্কারবিরোধী গোষ্ঠী অনেক বেশি শক্তিশালী; কর ও ঋণখেলাপিরা একসূত্রে গাঁথা।

সেলিম রায়হান বলেন, অতিধনীদের করের আওতায় আনা না গেলে ও ন্যায্যভাবে কর আদায় করতে না পারলে কর ব্যবস্থাপনায় ন্যায্যতা আসবে না। কালোটাকা ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করার সুযোগ সাংবিধানিক চেতনাবিরোধী। এটি দুর্নীতিকে উৎসাহিত করছে; দুর্নীতি সর্বগ্রাসী হয়ে উঠছে। দরিদ্র ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের জীবনে তার প্রভাব পড়ছে।

সেলিম রায়হান আরও বলেন, এখন জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বাড়ানোর সময় নয়। নিকট ভবিষ্যতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা প্রধান কাজ। পাশাপাশি দরিদ্রদের স্বস্তি দিতে আরও উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

বাজেট পর্যবেক্ষণকারী সানেমের গবেষক দলে ছিলেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, গবেষণা পরিচালক ড. সায়েমা হক বিদিশা, জেষ্ঠ্য গবেষণা সহযোগী ইসরাত হোসাইন, ইশরাত শারমিন, আফিয়া মুবাশশিরা তিয়াশা, গবেষণা সহযোগী খন্দকার ইফফা, সাফা তাসনিম ও গবেষণা সহকারী নাফিসা জামান।

Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়