আট দিনে দুই ব্যাংক থেকে ১৩ কোটি টাকা তোলেন বেনজীর
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
সংগৃহিত
নিজস্ব প্রতিবেদক/: দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর দেশত্যাগের আগে দুই ব্যাংক থেকে প্রায় ১৩ কোটি টাকা তুলেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক ছাড়াও কমিউনিটি ব্যাংক থেকে এ টাকা উত্তোলন করা হয়। বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ পেয়ে এ বিষয়ে হাইকোর্টে জমা দেয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আজ সোমবার (২৮ জুলাই) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে দুদকের অগ্রগতি প্রতিবেদনটি দাখিল করার কথা রয়েছে। এর আগে গণমাধ্যমে বেনজীরের দুর্নীতি ও সম্পদের পাহাড় নিয়ে প্রতিবেদনের পর নড়েচড়ে বসে দুদক। ঢাকা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, বান্দরবান ও গাজীপুরে নামে-বেনামে বিভিন্ন সম্পদের তথ্য পায় সংস্থাটি। এরপর থেকে ধারণা করা হয়, বিপুল অর্থ-সম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন বেনজীর। দুদক জানিয়েছে, অগ্রগতি প্রতিবেদনে তারই তথ্য মিলেছে।
অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাবেক আইজিপি বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ১১৬টি ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। যারমধ্যে অনেক অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্যও পাওয়া গেছে। আর এই ১১৬টি ব্যাংক হিসাবগুলোর মধ্যে সঞ্চয়ী, চলতি, স্থায়ী আমানত ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব রয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আট দিনে (২৩-৩০ এপ্রিল) সোনালী ব্যাংক ও কমিউনিটি ব্যাংকের চলতি হিসাব থেকে ১২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যে কমিউনিটি ব্যাংকের করপোরেট শাখায় থাকা ৩টি চলতি হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্য ওই তিনটি হিসাব থেকে ২৩ থেকে ২৯ এপ্রিল সময়ে ৬ কোটি ৫২ লাখ ৭৮ হাজার ৯৬৮ টাকা উত্তোলন করেছেন। এই তিন হিসাবের মধ্যে একটি বেনজীরের নিজের নামে এবং বাকি দুটি তার স্ত্রী ও বড় মেয়ের নামে খোলা।
অন্যদিকে, দুদকের অনুসন্ধান শুরু পর থেকে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে সাউদার্ন বিজনেস ইনিশিয়েটিভের চলতি হিসাব থেকে ২৯ এপ্রিল ৩ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। পরদিন ৩০ এপ্রিল আরও ৩ কোটি ৭ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এ ছাড়া বেনজীরের মালিকানাধীন সাভানা ফার্ম প্রডাক্টসের চলতি হিসাব থেকেও ৩০ এপ্রিল ১৪ লাখ টাকা তোলা হয়।
দেশ-বিদেশে বেনজীর ও তার পরিবারের সম্পদ অর্জনের বিষয়ে গত ২২ এপ্রিল দুদক অনুসন্ধান শুরু করলে অনুসন্ধান চলাকালে গত ৪ মে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান তারা। এর আগে ৩ মে পর্যন্ত দেশে ছিলেন বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মীর্জা, মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর, মিজ তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীর ও মিজ যাহরা যারীন বিনতে বেনজীর।
দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি গঠনের পর পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে গত ২৩ এপ্রিল থেকে টাকা সরাতে থাকেন সাবেক এই আইজিপি। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, অনুসন্ধান শুরুর পর বেনজীরের টাকা সরিয়ে নেয়া এবং টাকা তোলার তৎপরতা প্রমাণ করে তার অপরাধপ্রবণ মানসিকতা।
তিন দফায় সাবেক আইজিপির প্রায় ৭শ’ বিঘা জমি ক্রোক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জব্দ রয়েছে, ১২টি ফ্ল্যাট, ৩৩টি ব্যাংক হিসাবসহ বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। দেশে-বিদেশে নামে-বেনামে আরও সম্পত্তি থাকতে পারে বলে ধারণা দুদকের। সংস্থাটির আইনজীবী বলছেন, এ বিষয়ে শিগগিরই মামলার সিদ্ধান্ত আসবে।