মাগুরার বিস্ময় বালক ফাহিম মারা গেছেন
মাগুরা প্রতিনিধি || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: ফাইল ফটো
ঢাকা (১২ নভেম্বর): মাগুরার বিস্ময় বালক ফাহিম-উল করিম মারা গেছেন। বুধবার রাত পৌনে ১১ টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধীতা জয় করে বাড়িতে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে স্বাবলম্বী হয়ে তিনি সাড়া জাগিয়েছিলেন।
ফাহিম-উল করিমের বাসা মাগুরা শহরের মোল্যা পাড়া এলাকায়। বুধবার সকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফরিদপুর নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান, ডুচেনে মাসকিউলার ডিসট্রফি (ডিএমডি) রোগে ভুগছিলেন ফাহিম।
২২ বছর বয়সী ফাহিম বিরল এক রোগে গোটা শরীর অচল হয়ে যায়। সচল শুধু মাথা ও ডান হাতের দুটি আঙুল। এগুলোকে কাজে লাগিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনেন তিনি। শুধু তাই নয়, নিজের আয় দিয়ে মাগুরা শহরে জমি কিনে বাড়ি করে মা-বাবার আজীবনের স্বপ্ন পূরণ করেছেন।
ফাহিমের কাজে খুশি হয়ে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তাকে একটি ল্যাপটপ উপহার দিয়েছেন।
ফাহিমের বাবা রেজাউল করিম একটি বেসরকারি কোম্পানির বিপণন কর্মী। তিনি জানান, মাগুরা শহরে ভাড়া বাসায় সন্তান, স্ত্রী, ফাহিমসহ দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি বসবাস করে আসছিলেন। টানাটানির সংসার হলেও ভালোই কাটছিল তাদের দিন। একমাত্র ছেলে ফাহিম ২০১২ সালে জেএসসি পরীক্ষার আগে হঠাৎ শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে।
দৃঢ় মনোবল, প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও মেধা কাজে লাগিয়ে ফাহিম সফল ফ্রিল্যান্সার হন। ২০১৬ সালে অন্যের সহযোগিতা, প্রাইভেট পড়িয়ে জমানো টাকা ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে তিনি একটি ল্যাপটপ কেনেন। এরপর ইন্টারনেটে গুগল ও ইউটিউব ঘেঁটে বিভিন্ন কাজ শিখে নেন। ২০১৭ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইন মার্কেটে ফাইবারে অ্যাকাউন্ট খুলে কাজ খুঁজতে থাকেন। ক'দিনের মধ্যে পাঁচ ডলারের একটি কাজ পেয়ে যান। অল্প সময়ের মধ্যে সফলভাবে কাজটি করার জন্য বায়ার তাকে আরও ১০ ডলার বোনাস দেন। এর পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ফাহিমকে। প্রথমে ব্যানার ও বিজনেস কার্ড দিয়ে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে সব ধরনের কাজই করেন।
কাজের দক্ষতার কারণে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সার ফাহিম বিশ্বের ৩০ থেকে ৩৫টি দেশের কাজ করতেন। অর্ডার এত বেশি যে, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সময় দিলেও কাজ শেষ হয় না। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে গত চার বছর ধরে ফাহিম মাসে গড়ে ৫০ হাজার টাকা করে আয় করেছেন। তার উপার্জনে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরে। বোনের লেখাপড়া চলছিল।