সোমবার

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪


২৫ ভাদ্র ১৪৩১,

০৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাংলাদেশকে ঋণের ফাঁদে পড়ার চিন্তা করতে হবে না: চীনের রাষ্ট্রদূত

নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ০০:৪১, ২৭ জুন ২০২১  
বাংলাদেশকে ঋণের ফাঁদে পড়ার চিন্তা করতে হবে না: চীনের রাষ্ট্রদূত

চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা (২৬ জুন): বাংলাদেশকে কখনও কথিত ঋণের ফাঁদে পড়ার চিন্তা করতে হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সহযোগিতায় ঋণ কখনো কূটনৈতিক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হয়ে উঠবে না বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন।

বৃহস্পতিবার কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিতবাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাশীর্ষক ওয়েবিনারে মূল আলোচক হিসেবে এক প্রশ্নের জবাবে চীনের রাষ্ট্রদূত একথা বলেন। অনুষ্ঠানটি কসমস ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। খবর ইউএনবি।

বাংলাদেশ খুব দক্ষতার সঙ্গে বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা করে আসছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি বলব যে আপনারা খুবই দক্ষতার সঙ্গে বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা করেছেন এবং আপনাদের কোনো অসামঞ্জস্যপূর্ণ ঋণ নেই। তাই কথিত ঋণের ফাঁদ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

চীনের অর্থায়নে সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার ঋণের ফাঁদের পড়ার বিষয়টি উঠে আসে আলোচনার এক পর্যায়ে। চীনের বিরুদ্ধে ঋণের ফাঁদের ফেলে কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংস্থা। এশিয়া আফ্রিকা মহাদেশের অনেক দেশকে চীন ঋণের ফাঁদে ফেলে কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত জানান, শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশসহ কোনো দেশেই চীন ঋণের ফাঁদ তৈরির চেষ্টা করে না। এমন দাবির ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর প্রমাণ নেই দাবি  করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে সুপরিকল্পিত নীতিগত কাঠামো এবং দক্ষ কর্মকর্তা মন্ত্রী রয়েছেন। তাই আপনাদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, সম্প্রতি এক নিবন্ধ পড়ে জানতে পারি শ্রীলঙ্কার বর্তমান মোট ঋণের মাত্র আট শতাংশ চীনের কাছ নেওয়া। তাছাড়া এই আট শতাংশ ঋণের অধিকাংশই বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে নেওয়া।

আলোচনায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো . দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, চীন বাংলাদেশের শীর্ষ বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে পরিণত হচ্ছে। দেশের বড়-বড় প্রকল্পগুলোতে চীনের বিনিয়োগ বাড়ছে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে চীনের এমন অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সংস্থা ঋণের ফাঁদ হিসেবে উল্লেখ করছে। আর এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে।

তবে অর্থনীতিবিদ . দেবপ্রিয় বলেন, সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে এবং দেশের মোট ঋণের বড় অংশই আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া। কিন্তু ২০২৪ সাল নাগাদ বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক শুধুমাত্র ঋণের কারণেই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারে বলে মনে করেন . দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

ওয়েবিনারে ঋণ বিষয়ক আলোচনার জবাবে চীনের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ চীনের মধ্যকার বর্তমান চলমান সম্পর্ক বাংলাদেশের প্রতি চীন সরকার জনগণের সমর্থনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। দুই দেশের সুসম্পর্ক বাংলাদেশকে আরও লাভবান করবে বলে আশ্বস্ত করেন রাষ্ট্রদূত।

ভারতকে চীন কখনও নিজেদের কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেনি উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন কখনও ভারতকে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে না। আমরা মনে করি আমাদের (চীন-ভারত) সম্পর্ক আরও উন্নত করার সুযোগ রয়েছে। তাই কখনও ভাববেন না যে, ভারতের প্রতি চীনের বিদ্বেষমূলক মনোভাব রয়েছে। এমন কিছুই নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত লি জিমিং জানান, বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে ব্যাপক হারে প্রযুক্তির আদান-প্রদান চলছে। এসময় উদাহরণ হিসেবে লি আরও জানান, বেশ কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের কাছ থেকে পোশাক আমদানি করতো না চীন। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের এক নম্বর রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্প খাত চীনেও জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এখন চীন পোশাক আমদানি করছে।

লি জিমিং বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাত এখন এতটাই উন্নতি করেছে যে, বাংলাদেশের কাছ থেকে চীন গার্মেন্টস পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণ হয় যে, দুই দেশের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রযুক্তির আদান-প্রদান ঘটছে।

আলোচনার এক পর্যায়ে একজন আলোচক চীন বিরোধী আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ভারতের জোট কোয়াডের প্রসঙ্গ তোলেন। বিষয়ে গত মে মাসে লি জিমিংয়ের মন্তব্য চীন-বাংলাদেশের মাঝে বেশ অস্বস্তির তৈরি করে।

প্রসঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি শুধু এই জোটে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানোর সম্ভাবনার কথা আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হওয়ার পর এদেশের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে প্রথম যা জানতে পেরেছি, তা হলো বাংলাদেশ সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বে বিশ্বাস করে এবং কারো সঙ্গে বৈরিতায় জড়াতে চায় না। তাই আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ কোনো ক্ষুদ্র চক্রান্তকারী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়াবে না, বিশেষ করে কোনো যুদ্ধবাজ সামরিক জোটে।

চীনের অর্থায়নে তিস্তার গভীরতা বাড়ানো প্রকল্পের ব্যাপারে লি জিমিংকে প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা প্রকল্পের ব্যাপারে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত সাধারণ মানের।

বাংলাদেশের প্রস্তাবনার ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, আপনারা প্রথমে একটি পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন তৈরি করুন। এর পরে আমরা এই প্রকল্প মূল্যায়নের কাজ শুরু করব।

আলোচনা অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সমাপনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান এবং সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা . ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।

এছাড়া সভায় আলোচক প্যানেলে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক করিম, সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো . দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবীন চৌধুরী, ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী গবেষক . জু ইওংমেং, চীনা ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহকারী গবেষণা ফেলো . নিং শেংনান, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক . রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়