অবশেষে ভাসানচরে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: ভাসানচরে যেতে কুতুবপালং ক্যাম্পের সামনে অপেক্ষারত রোহিঙ্গা একটি পরিবার বিজনেস ইনসাইডার
ঢাকা (০৪ ডিসেম্বর): অবশেষে রোহিঙ্গাদের একটি দল কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তারা কয়েকটি বাসে করে কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবির থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়।
আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম থেকে তাদের ভাসানচরে যাওয়ার কথা।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের পুরো প্রক্রিয়া ছিল ঐচ্ছিক। যারা যেতে আগ্রহী, শুধু তাদেরই স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এই স্থানান্তরের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাসহ (আইএনজিও) স্বার্থান্বেষী কিছু মহলের অব্যাহত নেতিবাচক প্রচারণার কারণে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রকাশ্যেই বলেছেন, আইএনজিওগুলোই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে মূল বাধা। মূলত আইএনজিওগুলো নিজেদের স্বার্থে কক্সবাজার ছেড়ে ভাসানচরে যেতে চায় না এবং রোহিঙ্গাদেরও নিরুৎসাহ করে।
রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়টিও তাদের এ দেশে আশ্রয় দেওয়ার মতো সাময়িক। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ওপরই সরকার জোর দিচ্ছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে প্রত্যাবাসন আলোচনা আবার শুরু করতে চীন কাজ করছে। এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে আগ্রহ দেখিয়েছে ভারত। মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের আগে রোহিঙ্গাদের এ দেশে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে হতে পারে।
মূলত কক্সবাজারের ওপর পরিবেশগত চাপ ও ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রথম দফায় আজ প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হতে পারে। আগামী দিনে পর্যায়ক্রমে আগ্রহী অন্য রোহিঙ্গাদের এভাবে ভাসানচরে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারের।
গতকাল উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়েই শুরু হয় রোহিঙ্গাদের বহুল আলোচিত ভাসানচরমুখী স্বেচ্ছাযাত্রা। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবির থেকে স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গাদের সেখানে যাত্রার প্রথম দিনেই যেন ঢল নামে। কার আগে কে গাড়িতে উঠবে—এমনই এক দৃশ্য দেখা গেছে উখিয়া কলেজ মাঠের ট্রানজিট ক্যাম্পে।
গত কিছুদিন ধরে দফায় দফায় শিবিরগুলোর রোহিঙ্গা নেতা এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) প্রতিনিধিরা ভাসানচর পরিদর্শন করে আসছিলেন। সেই থেকে ভাসানচর সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়। ভাসানচর ঘুরে দেখা রোহিঙ্গা নেতা ও এনজিও প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সেখানে বসবাসসহ নানা বিষয়ে জেনে রোহিঙ্গাদের অনেকে সেখানে যাওয়ার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করে আসছিল।
অন্যদিকে এত দিন পর রোহিঙ্গাদের ভাসানচরমুখী যাত্রায় স্থানীয় এলাকাবাসীও বেজায় খুশি। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে আসা রোহিঙ্গা ঢলের কারণে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয়রাও নানাভাবে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছিল। এলাকার লোকজন গতকাল ভাসানচরমুখী রোহিঙ্গাবোঝাই বাসের বহর দেখে আনন্দে মেতে ওঠে।