পদ্মার দুই পাড় যুক্ত করে দৃশ্যমান পুরো সেতু
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: বিজনেস ইনসাইডার
ঢাকা (১০ ডিসেম্বর): স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন পুরোটাই দৃশ্যমান। মূল অবকাঠামো নিমার্ণের সবশেষ ৪১ তম স্প্যানটি বসার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের আশা আকাঙ্খা পূরণ হলো।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাওয়া প্রান্তে ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর সর্বশেষ স্প্যানটি বসানোর কাজ শুরু হয়। বেলা ১২টা ২ মিনিটে সেতুর মাওয়া প্রান্তের ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয়েছে টু-এফ নম্বর স্প্যানটি।
আর এর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুর পুরো মূল কাঠামো দৃশ্যমাণ হল। তৈরি হলো রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। সরকার সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞদের ধারণা এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, পর্যটন সবক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুর কাদের বিজনেসইনসাইডার’কে জানান, মূল সেতুর অবকাঠামোর কাজ আজ (বৃহস্পতিবার) শেষ হলো। এরপর দ্বিতল এই সেতুর ঢালাইয়ের কাজ, অ্যাপ্রোচ রোড ও ভায়াডাক্ট পুরোপুরি প্রস্তুত করা, রেলের জন্য স্ল্যাব বসানো হয়ে গেলেই স্বপ্নের পদ্মাসেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উপযোগী হবে এবং খুলে দেওয়া হবে।
৩২০০ টন ওজনের ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্প্যানটি মাওয়ার কুমারভোগের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে নিয়ে ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির কাছে পৌঁছে যায় ভাসমান ক্রেইন ‘তিয়ান ই’। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় হালকা কুয়াশাছন্ন পরিবেশের মধ্যে শুরু হয় স্প্যান স্থাপনের কাজ। যে ৪১টি স্প্যান দিয়ে পুরো পদ্মা সেতু তৈরি হচ্ছে, তার মধ্যে জাজিরা প্রান্তে ২০টি বসানো হয়েছে, আর মাওয়া প্রান্তে বসানো হয়েছে ২০টি স্প্যান। একটি স্প্যান বসেছে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের মাঝখানে।
পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিবছর কী পরিমাণে যানবাহন চলাচল করবে, তা নিয়ে ২০০৯ সালে একটি বিস্তারিত সমীক্ষা করেছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এতে দেখা গেছে, ২০২২ সালের শুরুতে যদি পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়, তাহলে ওই বছর সেতু দিয়ে চলাচল করবে প্রায় ২৪ হাজার যানবাহন। এ সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়বে। এ হিসেবে ২০৫০ সালে প্রায় ৬৭ হাজার যানবাহন চলবে পদ্মা সেতু দিয়ে।
জানা গেছে,সব প্রক্রিয়া শেষ করে ২০২২ সালের স্বাধীনতা দিবসে এ সেতু উদ্বাধন করা হবে। যাতায়াতের সময় কমানোর পাশাপাশি দ্বিতল এ সেতুতে বাস ট্রাকের পাশপাশি চলবে ট্রেন। এ সেতু চালুর পর দক্ষিণের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নত হবে। এর ফলে দেশের জিডিপি বেড়ে যাবে এক থেকে দেড় শতাংশ। কমে যাবে দারিদ্রের হার। নতুন করে গড়ে উঠবে ভারী শিল্প কারখানা।
এরইমধ্যে এই সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্য এবং ছোট ক্ষুদ্র বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার প্রসার ঘটতে শুরু করেছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে এ সেতু। ট্রান্স এশিয়া রেলের অংশ হলে এতে বাড়বে মালবাহী ট্রেনের চলাচল। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ যেসব সুবিধা পেতে পারে সে ক্ষেত্রে অভাবনীয় ভূমিকা রাখবে স্বপ্নের এ সেতু।