২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট: একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ
মৌসুমী ইসলাম || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ
‘কোভিডের অভিঘাত কাটিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ —এই স্লোগানে আজ ৯ জুন মহান জাতীয় সংসদে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যে বাজেট পেস করেছেন তার জন্য আমি সাধুবাদ জানাই। এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য ছিল সক্ষমতার উন্নয়ন। সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পৌনে সাত লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা হল।
পুরো বাজেটে বিশ্লেষণে আমরা মূল যে জিনিসটি দেখতে পাই তা হল আয় ও ব্যয়ের বড় চ্যালেঞ্জ। সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি খাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষা খাতসহ বেশ কিছু খাতকে। তবে, আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি ও চার লাখ ৩৩ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয়ের যে বিশাল চ্যালেঞ্জ সামনে রয়েছে, তা মোকাবিলায় যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা প্রশংসনীয়।
দেশীয় শিল্পের অবস্থান শক্ত ও রাজস্ব আহরণ গতিশীল করতে বিলাসবহুল ও বিদেশি পণ্যের ওপর কর আরোপকে সাধুবাদ জানাই। উৎপাদকের কাঁচামাল সরবরাহের ওপর উৎসে কর ৭ শতাংশ থেকে ৪ এবং ট্রেডিং পণ্য সরবরাহের উৎসে কর কর্তনের হার ৭ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ করায় তৃণমূল থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা এর সুফল পাবেন।
এক লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ এবং বিদেশ থেকে অর্থ সম্পত্তি আনতে যে ধরনের কর আরোপ করা হয়েছে তা কতটুকু সুফল বয়ে আনবে তা সময় বলে দেবে। মনে রাখতে হবে, অনুদানসহ ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। সুদ পরিশোধবাবদ খরচ হবে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৩ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ, আর বিদেশি ঋণের সুদ ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অতএব, ব্যাংক খাত নিয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকা জরুরি।
কর্পোরেট কর হার কমানো, শেয়ার বাজারের লিস্টেড ও নন লিস্টেড কোম্পানির কর হারের পরিবর্তন ব্যবসায় গতিধারা সৃষ্টি করবে। আয় করের সীমা অপরিবর্তিত রেখে করের আওতা বাড়ানো যে প্রক্রিয়া প্রশংসনীয়।
উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে প্রযুক্তি পণ্যের ওপর কর ছাড় সুফল বয়ে আনবে। এসএমই ও তৃণমূলের উদ্যোক্তাদের জন্য যে ধরনের সুবিধা সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে দেওয়া হচ্ছে তা কাজে লাগাতে হবে। কর অব্যাহতি, পণ্যের বহুমুখী করণ ও রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে বিদেশি পণ্যের ওপর কর আরোপ, কাঁচামালের সুবিধা এবং বাস্তবায়নের অগ্রগতির জন্য যে ধরনের সুপারিশ করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। পুরনো সমস্যা কাটিয়ে নতুন বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীকালে সংশোধনীতে আরও ১ হাজার কোটি এবং জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও পণ্য কেনাকাটায় বড় ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়নি। এ বছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের জন্য ৩৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যা মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এরমধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৯ হাজার ২৮১ কোটি টাকা আর স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।