‘মারাত্বক সংক্রামক’ কোভিড-১৯ এতোটা ভয়াবহ নাও হতে পারে!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: বিবিসি
ঢাকা (২৮ ডিসেম্বর): ব্রিটেনে প্রথম সন্ধান পাওয়া কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের নতুন রূপ নিয়ে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণ করোনাভাইরাসের এখন পর্যন্ত বিভিন্ন রূপের মধ্যে এটাই সবচেয়ে সংক্রামক। তাই এর কবল থেকে সুরক্ষার অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিমান চলাচলসহ যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
তবে যে শঙ্কা বা ভয় থেকে সারা বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়েছে করোনাভাইরাসের নতুন রূপ ততটা ভয়াবহ বা শঙ্কার কারণ নাও হতে পারে। বিশেষষজ্ঞরা এর পক্ষে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যও উপস্থাপন করছেন।
বি.১.১.৭ বা ভিইউআই-২০২০১২/০১ নামের পরিচিত করোনাভাইরাসের নতুন এ রূপই কোভিড-১৯ এর প্রথম মিউটেশন বা পরিবর্তিত রূপ নয়। বরং এ মিউটেশনকে প্রথম বারের মতো গুরুত্বের সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
রেকর্ড অনুযায়ী করোনাভাইরাসের প্রথম ৫০,০০০ জেনম থেকে ১২,০০০ বেশি মিউটেশন শনাক্ত করা হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এর চেয়েও চারগুন বেশি মিউটেশন রেকর্ড করেছেন।
করোনাভাইরাসের নতুন এ রূপ আরো মারাত্বক হতে পারে এখন পর্যন্ত এমন কোন তথ্য প্রমাণ মেলেনি। তবে এটি সহজে বিস্তার ঘটায় বা আরো বেশি সংক্রামক বলে অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ মিলেছে। আর এতেই হয়তো আমাদের জন্য কল্যাণ লুকিয়ে আছে।
যুক্তরাজ্যের ইউভার্সিটি অব রিডিংয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক আয়ান জোনসের মতে, ভাইরোলজির সাধারন নিয়ম হচ্ছে সংক্রমণ বেশি হলে এর অসুস্থ করার ক্ষমতাও কমে যাবে।
একই কথা বলেছেন উনবিংশ শতাব্দির চিকিৎসক থেয়োবাড স্মিথও। তিনি বলেছেন, এটা আসলে নতুন কোন হাইপথেসিস নয়। এর ভিত্তি আসলে ’ ল অব ডিক্লাইনিং ভিরুলেন্স’।
স্মিথের মতে, প্যাথোজেন এবং হোস্ট ভাইরাসের মধ্যে বিশেষ সাম্যাবস্থা (ডেডিকেট ইকুইেলিব্রিয়াম) রয়েছে। এর ফলে ভাইরাসের বিবর্ধনে ভয়াবহতার মাত্রা কমে যায়।
ভাইরোলজিস্টগণ বলছেন ভাইরাসের পরিবর্তিত নতুন রূপ যদি বেশি মারাত্বক বা ভয়াবহ হয় তাহলে সেটি অন্যকে সংক্রমিত বা ছড়িয়ে পরার আগেই এর হোস্টকেই মেরে ফেলার সক্ষমতা অর্জন করে। অতএব প্যাথেজেনের কারণে একটি মিউটেশন যতটা সম্ভব সংক্রামকে পরিণত হতে আরো বেশি ছড়িয়ে পারে।
এক্ষেত্রে ইবোলা ভাইরাসের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। এ ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল এবং খুবই ভয়াবহ ছিল। কিন্তু অবশেষে দ্রুত ছড়িয়ে পরার কারণেই এ ভাইরাসের হোস্টের অবসান ঘটেছে। আর ছড়ানোর প্রবনতা কমে যাওয়ায় এটি একেবারে নিঃশেষ হয়ে গেছে। জোনস উদাহরণ হিসেবে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার কথা উল্লেখ করেছেন। পরীক্ষাগারে পরীক্ষার সময় দেখা গিয়েছিল এটি বেশ সহজে ছড়িয়ে পরতে পারে। কিন্তু পশুর ওপর পরীক্ষা করায় কোন পশুর মৃত্যু হয়নি। এতে বোঝা যাচ্ছিল ভাইরাসটি হয় প্রাণঘাতী নতুবা বেশি সংক্রমক হতে পারে। কিন্তু দুটোই এক সঙ্গে হতে পারে না।
তবে ইউনিভার্সিটি অব নটিংহামের ভাইরোলজির অধ্যাপক জোনাথন বল এ ধরণের চিন্তাভাবনার ব্যাপারে অবশ্য সতর্ক থাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি জলাতঙ্ক এবং এইআইভি ভাইরাসের উদাহরণ টেনেছেন। সারা বিশ্বে এইচআইভির কারণে ৩০ মিলিয়ন মানুষর মৃত্যু হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে ভ্যাকসিন কেন সব সময় কার্যকর হয় না সেটার ব্যাখ্যা মিউটেশন দিতে পারে।
জোনাথন বলের যুক্তিকে সমর্থন করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজের ভাইরোলজিস্ট রবীন্দ্র গুপ্তা। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, কোন ভাইরাস আগেই ছড়িয়ে থাকলে প্যাথেজেন সেটার হোস্টকে মেরে ফেলতে পারে সেটা ঠিক আছে। সেই একই কারণে এইচআইভি এর হোস্টকে মেরে ফেলেছে। তবে সেটি এখনো ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পরতে সক্ষম রয়েছে।
করোনভাইরাসের মিউটেশন বা পরিবর্তিত রূপ আমাদের জন্য প্রাণঘাতী হবে কি হবে না, সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে তারা একটা বিষয়ে একমত যে, কোন ভাবেই এ ভাইরাসকে বিবর্তন ঘটতে দেয়া যাবে না এবং এর জন্য সহায়ক হয় এমন কোন মিউটেশনে আশ্রয় নিতে দেয়া যাব না।
সূত্র: টাইমস অব ইনডিয়া