Notice: Undefined index: HTTP_REFERER in /mnt/volume_sgp1_04/busine23n9s5der/public_html/common/config.php on line 2

Notice: Undefined index: HTTP_ACCEPT_LANGUAGE in /mnt/volume_sgp1_04/busine23n9s5der/public_html/common/config.php on line 14
ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি যেভাবে কাজ করে

শুক্রবার

১৫ নভেম্বর ২০২৪


১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১,

১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি যেভাবে কাজ করে

আমেরিকায় নির্বাচন

বিআই ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ১৬:৩৫, ৩ নভেম্বর ২০২০  
ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি যেভাবে কাজ করে

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা (৩ নভেম্বর): যুক্তরাষ্ট্রে বেশি ভোট পেলেই যে একজন প্রার্থী সবসময় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন তা কিন্তু নয়। জনগণের সরাসরি বা প্রত্যক্ষ ভোটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। ইলেকটোরাল কলেজ নামে পরিচিত এক দল কর্মকর্তার পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

কলেজ শব্দটি বলতে একদল লোককে বোঝায় যারা নির্বাচকের ভূমিকা পালন করেন। তাদের সবার কাজ প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা। প্রত্যেক চার বছর অন্তর অন্তর, নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ পরে ইলেকটোরাল কলেজের নির্বাচকরা তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য একত্রিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী এই পদ্ধতিতেই একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এ পদ্ধতি কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের আইনের জটিল এক সমন্বয়ের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। তাত্ত্বিকভাবে বলা যায়, প্রার্থীদের মধ্যে সারা দেশে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান ইলেকটোরাল কলেজ তাকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচন করে থাকে।

ইলকেটোরাল কলেজের কাজের পদ্ধতি: ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে প্রত্যেকটি রাজ্যের হাতে থাকে কিছু ভোট। কোন রাজ্যের কতজন ইলেকটোর বা নির্বাচক থাকবেন সেটা নির্ভর করে ওই রাজ্যের জনসংখ্যার ওপর। সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে। ফলে এই রাজ্যে ইলেকটোরের সংখ্যা সর্বোচ্চ, ৫৫। ছোট ছোট কিছু রাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অফ কলাম্বিয়ার রয়েছে তিনটি করে ভোট। আলাস্কা এবং নর্থ ড্যাকোটা রাজ্যের হাতেও রয়েছে তিনটি করে ভোট।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন প্রার্থীরা সারা দেশে ভোটারদের কাছ থেকে যেসব ভোট পান সেগুলোকে বলা হয় পপুলার ভোট এবং ইলেকটোরাল কলেজের ভোটকে বলা হয় ইলেকটোরাল ভোট। কোনো একটি রাজ্যে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি পপুলার ভোট পাবেন তিনি ওই রাজ্যের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে যাবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টেক্সাসে রিপাবলিকান প্রার্থী যদি ৫০.১% ভোট পান, তাহলে ওই রাজ্যের ৩৮টি ইলেকটোরাল ভোট তাদের পকেটেই যাবে।

ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। মাইন ও নেব্রাসকা এই দুটো অঙ্গরাজ্য বাদে বাকি সবগুলো রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট যোগ দিলে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। মোট ইলেকটোরাল ভোট ৫৩৮ এর অর্ধেক ২৬৯ এবং জয়ী হয়ে হোয়াইট হাউজে যাওয়ার জন্যে আরো একটি ভোট এভাবেই ২৭০টি ভোট পেতে হবে একজন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য।

একেক রাজ্যের হাতে একেক সংখ্যক ভোট থাকার কারণে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণার ব্যাপারে এমনভাবে ছক তৈরি করেন যেখানে তারা বেশি ভোট আছে এমন রাজ্যগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। গত পাঁচটি নির্বাচনের মধ্যে দুটোতেই কম পপুলার ভোট পেয়েও ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জর্জ বুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ কম পপুলার ভোট পেয়েও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।

এই পদ্ধতি বেছে নেওয়ার কারণ: অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে যখন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়, তখন দেশের বিশাল আকার ও বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে যোগাযোগ কঠিন হওয়ার কারণে জাতীয়ভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করা প্রায় অসম্ভব ছিলো। তখনও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিচয় ঠিক মতো গড়ে ওঠেনি, অঙ্গরাজ্যগুলোও তাদের নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে ছিলো অনেক বেশি সোচ্চার, রাজনৈতিক দলগুলোকে সন্দেহের চোখে দেখা হতো এবং পপুলার ভোটকে মানুষ ভয় পেতো।

সংবিধান প্রনেতারা ১৭৮৭ সালে সংবিধান রচনার সময় কংগ্রেস এবং জনগণের সরাসরি ভোটে (পপুলার ভোট) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুটো ধারণাই বাতিল করে দেন। তাদের যুক্তি ছিল পপুলার ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে লোকেরা তাদের স্থানীয় প্রার্থীকে ভোট দেবে এবং তার ফলে বড় রাজ্যগুলো আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে। ছোট ছোট রাজ্যগুলো এই ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিকে সমর্থন করে কারণ এর ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো এই পদ্ধতির পক্ষ নেয় কারণ সেসময় এসব রাজ্যে দাসের সংখ্যা ছিলো অনেক। দাসদের ভোটাধিকার না থাকা সত্ত্বেও আদম শুমারিতে তাদের গণনা করা হতো। এছাড়াও সংবিধান রচয়িতারা চাননি যে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বসে শুধু আইন প্রণেতারা দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করুক।

নির্বাচনের ইতিহাস: ২০১৬ সালে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, যদিও তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ ভোট কম পেয়েছিলেন।
২০০০: রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডাব্লিউ বুশ ২৭১টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, যদিও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোর পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ভোট বেশি পেয়েছিলেন।
১৮৮৮: রিপাবলিকান প্রার্থী বেঞ্জামিন হ্যারিসন ২৩৩টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, যদিও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড এক লাখ ৪৫৬ ভোট বেশি পেয়েছিলেন।
১৮৭৬: রিপাবলিকান রাদারফোর্ড বি হেইজ ১৮৫টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, কিন্তু ডেমোক্র্যাট প্রার্থী স্যামুয়েল জে টিলডেন দুই লাখ ৬৪ হাজার ভোট বেশি পেয়েছিলেন।
১৮২৪: ইলেকটোরাল কলেজ চারজন প্রার্থীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে হাউজ জন কুইন্সি অ্যাডামসকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে, যদিও এন্ড্রু জ্যাকসন তার চেয়েও বেশি পপুলার ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছিলেন।

কম পপুলার ভোট পেয়েও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া: এটা এই পদ্ধতির সবচেয়ে নেতিবাচক দিক। ইতিহাসে দেখা যাচ্ছে ১৮০৪ সালের পর পাঁচজন প্রেসিডেন্ট পপুলার ভোট বেশি না পেয়েও নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ২০০০ সালের নির্বাচনে আল গোর সারা দেশের মোট ভোটের ৪৮.৩৮% অর্জন করেন। জর্জু বুশ পান ৪৭.৮৭%। তার পরেও জর্জ বুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন কারণ তিনি ২৭১টি ইলেকটোরাল ভোট পান যেখানে গোর পান ২৬৬টি। জয় নির্ধারণী ইলেকটোরাল ভোটগুলো এসেছিল ফ্লোরিডা থেকে। সেখানকার ২৫টি ইলেকটোরাল ভোটই গেছে জর্জ বুশের দিকে, যদিও তিনি ওই রাজ্যে মাত্র ৫৩৭টি পপুলার ভোট বেশি পেয়েছিলেন।

আরেকটি নেতিবাচক দিক হলো অনেক রাজ্যেই ফলাফল কী হবে সেটা আগে থেকে নিশ্চিত করে বোঝা যায়। ফলে অনেকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে তাদের উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। প্রার্থীরাও সেসব রাজ্যে প্রচারণা চালিয়ে তাদের সময় নষ্ট করতে চান না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে ক্যালিফোর্নিয়া, ইলিনয় এবং নিউ ইয়র্ক ডেমোক্র্যাটের এবং টেক্সাস রাজ্যটি রিপাবলিকানের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

এ পদ্ধতির সুবিধা কী: ঐতিহাসিক কারণে এই ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়াও বেশিরভাগ নির্বাচনে পপুলার ভোটেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ১৮০৪ সালের পর ৫৩টি নির্বাচনে ৪৮ জনই নির্বাচিত হয়েছেন পপুলার ভোটে। এছাড়াও এই পদ্ধতিতে ছোট রাজ্যগুলো গুরুত্ব পায়। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের একটি মৌলিক নীতি- চেক এন্ড ব্যালেন্সও রক্ষিত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বৃহত্তম রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার জনসংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ১২.০৩%। কিন্তু এই রাজ্যের হাতে আছে ৫৫টি ইলেকটোরাল ভোট যা ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটের ১০.২২%। অন্যদিকে ওয়াওমিং রাজ্যের লোকসংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ০.১৮%। কিন্তু তাদের হাতে আছে তিনটি ইলেকটোরাল ভোট যা ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটের ০.৫৬%। এই কলেজ সিস্টেমের আরো একটি দিক হচ্ছে একজন প্রার্থীকে সারা দেশে ভোট পেতে হবে।

প্রার্থী ইলেকটোরাল কলেজের ২৭০টি ভোট না পেলে: সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী অনুসারে হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে থাকে। প্রত্যেকটি রাজ্যের প্রতিনিধির হাতে থাকে একটি করে ভোট। এর মানে প্রত্যেক রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এই ভোট নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে একজন প্রার্থীকে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে জিততে হবে।

সিনেট বাছাই করে ভাইস প্রেসিডেন্ট। সেজন্য সিনেটরদের হাতে থাকে একটি করে ভোট। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ১৮০৪ সালের পর এরকম ঘটনা একবারই ঘটেছে। ১৮২৪ সালে ইলেকটোরাল ভোটগুলো চারজন প্রার্থীর মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। তাদের সবাই সংখ্যগারিষ্ঠ ভোট পেতে ব্যর্থ হন।
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী এন্ড্রু জ্যাকসনের পক্ষে ছিল সবচেয়ে বেশি ইলেকটোরাল ভোট, পপুলার ভোটও তিনি বেশি পেয়েছিলেন। ফলে ধারণা করা হয়েছিল যে তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। কিন্তু চতুর্থ স্থানে যিনি ছিলেন সেই স্পিকার হেনরি ক্লে দ্বিতীয় স্থানে থাকা জন কুইন্সি অ্যাডামসকে নির্বাচিত করার ব্যাপারে হাউজকে প্রভাবিত করেন। অবশেষে  অ্যাডামসই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
সূত্র: বিবিসি

 

Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়