মায়ানমারে আরও ২০ জন নিহত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: নিরাপত্তা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে বিক্ষোভকারীরা সোমবার ব্যারিকেডের পেছনে আশ্রয় নেন। রয়টার্স
ঢাকা (১৬ মার্চ): মায়ানমারে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভ ও আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে আরও ২০ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার জান্তা বিরোধী বিক্ষোভে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় একটি মনিটরিং গ্রুপ জানিয়েছে।
ছয় সপ্তাহ আগে সামরিক বাহিনী দেশের ক্ষমতা দখলের পর মায়ানমারের বেসামরিক নেত্রী স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীকে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও তাজা গুলি নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারর্স (এএপিপি) জানিয়েছে, সোমবার সহিংসতায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন।
এএপিপি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হতাহতের সংখ্যা মারাত্মকভাবে বাড়ছে। ১ ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে সোমবারের হতাহতের মধ্যে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভকারীদের পাশপাশি এমন অনেকেই রয়েছেন যারা কোন সমাবেশেই অংশ নেননি। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই মায়ানমারের মধ্যাঞ্চলের। এছাড়া বাণিজ্যিক হাব বলে পরিচিত ইয়াঙ্গুনেও তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে।
এএপিপি বলছে ইয়াঙ্গুনে নিহতদের মধ্যে বাড়িতে অবস্থান করা দুজন নারীও রয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় এলোপাথারি গুলি করতে শুরু করলে তারা বাড়িতেই সেই গুলির শিকারে পরিণত হন।
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ব্রিটেন সবাই মিলে মায়ানমারে এ ধরণের সহিংসতার কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। জাতিসংঘ বলেছে মায়ানমারের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ইতোমধ্যেই নারী ও শিশুসহ ১৩৮জন প্রাণ হারিয়েছেন।
এদিকে মিয়ানমারে চীনবিরোধী ঘৃণা-বিদ্বেষ বেড়েই চলেছে। সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হওয়ায় সন্দেহ-অবিশ্বাস আরও জোরালো হচ্ছে। অভ্যুত্থানের নেপথ্যে বেইজিংয়ের হাত রয়েছে বলেও মনে করছে দেশটির জনগণ।
ফলে কয়েক সপ্তাহ ধরে জনমনে একটা ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। সেই ক্ষোভ থেকেই অভ্যুত্থানবিরোধী হাজার হাজার মানুষকে ইয়াঙ্গুনে চীনা দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করতেও দেখা গেছে।
তবে এবার বিক্ষোভের সঙ্গে ‘সরাসরি অ্যাকশন’ নিচ্ছে জনতা।
মিয়ানমারের শহরে শহরে চীনা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও কল-কারখানা পুড়িয়ে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েক ডজন কারখানায় আগুন দেওয়া হয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীদের এমন কর্মকাণ্ডে নড়েচড়ে বসেছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান ও কারখানার সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি নিজে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অগ্নিসংযোগকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে।
চীনের বিদেশনীতিতে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানকে অভ্যন্তরীণ সংকট আকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদ অভ্যুত্থানবিরোধী বিবৃতি দিতে গেলে সেখানেও আপত্তি তুলেছে বেইজিং।
ভারত, রাশিয়া ও ভিয়েতনামের সঙ্গে মিলে তারা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীদের অনেকেই তাই মনে করেন, ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানে চীনের সমর্থন রয়েছে। দ্য ইরাবতী জানায়, বাণিজ্যিক রাজধানী ও ইয়াঙ্গুনে চীনা অর্থায়নে পরিচালিত বেশ কয়েকটি কারখানা সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
অন্যতম শিল্পাঞ্চল হিসাবে পরিচিত ইয়াঙ্গুনের হ্লাইংথায়ায় রোববার চীনা অর্থায়নে পরিচালিত কয়েকটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। একই এলাকায় সোমবার সকালেও আরও কয়েকটি কারখানায় আগুন দেওয়া হয়।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতেও উঠে এসেছে চীনা কল-কারখানায় অগ্নিসংযোগের চিত্র।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, বিক্ষোভকারীদেরকে অগ্নিসংযোগ থেকে বিরত রাখতে এদিন মুহুর্মুহু গুলি ছোড়ে দাঙ্গা পুলিশ। এতে দফায় দফায় বহু বিক্ষোভকারী হতাহত হয়। এসব ঘটনার পরপরই কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় চীন।