মায়ানমারে গুলিতে ৯০ বিক্ষোভকারী নিহত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
মান্দালের রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
ঢাকা (২৭ মার্চ): মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৯০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর শনিবারের এ হতাহতের ঘটনাকে সবচেয়ে ভয়াবহ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শী এবং গণমাধ্যম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। খবর চ্যানেল নিউজ এশিয়া।
মায়ানমারের সেনাবাহিনীর শসস্ত্র বাহিনী দিবস পালনের দিনই এতো বেশি বিক্ষাভকারী হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। শসস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সেনা প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিং অং হ্লিং দেশের গণতন্ত্র এবং জনগণকে রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এদিকে শুক্রবার মায়ানমারের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন বলেছে রাস্তায় বের হলে বিক্ষোভকারীদের মাথায় এবং পেছনে গুর্লি খাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ ধরণের ঘোষণা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা ইয়াঙ্গুন, মান্দালেসহ অন্যান্য শহরে শনিবার বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
মায়ানমার নাউ এক রিপোর্টে জানিয়েছে, সারাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৯১জন নিহত হয়েছেন। এদিকে মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহকারী ইয়াঙ্গুনের এক গবেষক বলেছেন শনিবার গুলিতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩ জনে। এর আগে ১৪ মার্চ মায়ানমারে সর্বোচ্চ ৭৪ থেকে ৯০ জন নিহত হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
শনিবার মান্দালেতে গুলিতে নিহত কমপক্ষে ২৯ জনের মধ্যে মধ্যে পাঁচ বছরের শিশুও রয়েছে। মান্দালের কাছে সাগাইং অঞ্চল হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ইয়াঙ্গুনে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ২৪জন নিহত হয়েছে বলে মায়ানমার নাউ জানিয়েছে।
সকালে ইয়াঙ্গুনের ডালা শহরতলীর একটি থানার বাইরে কিছু লোক বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে এলোপাথারি গুলি করে। এ ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত এবং ১০জন আহত হন।
শহরের ইনসেইন এলাকায় বিক্ষোভের সময় অনুর্ধ্ব ২১ ফুটবল টিমের এক খেলোয়ারসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে সেখানকার এক বাসিন্দা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
ইনসেইন কারাগারের কাছে পূর্ব ঘোষিত এক র্যালিতে বিক্ষোভকারীরা হেলমেট পরে সাইকেল নিয়ে জড়ো হয়েছিল। সেখানে সেনাসদস্যরা গুলিবর্ষণ শুরু করলে বেশ কয়েকজন হতাহত হন। এদের মধ্যে ২১ বছর বয়সী এক পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন। তিনিও অভ্যুত্থান বিরোধী সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাঞ্চলে লাশিহো শহরে চারজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আর ইয়াঙ্গুনের কাছে বাগো অঞ্চলে আলাদা ঘটনায় আরো চারজন নিহত হয়েছেন। উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় হোপিন শহরে আরো একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
মান্দালের মধ্যাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে এলোপাথারি গুলি বর্ষণ শুরু করলে সেখানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় কমপক্ষে নয়জন নিহত হন। এদের মধ্যে একজন ডাক্তার এবং ১৪ বছরের এক কিশোরিও রয়েছেন।
মিয়িংগিয়ানের এক বিক্ষোভকারী জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে সেখানে একজন নিহত হয়েছেন। তিনি জানান, যেভাবে গুলি চালানো হয়েছে তাতে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়বে। তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের বিপ্লবের দিন’।
উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় শান স্টেটে নিরাপত্তা বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে নিরাপত্তা বাহিনী এলোপাথারি গুলি চালিয়েছে। এতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। আর পর্যটন নগরী বেগানে একজন ট্যুর গাইডকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে মায়ানমারের জাতিগত শসস্ত্র সংগঠন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন বলেছে থাই সীমান্তের কাছে তারা একটি সামরিক চৌকি দখল করে নিয়েছে। এ ঘটনায় একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও তাদের একজনসহ ১০জন নিহত হয়েছেন।
সামরিক চৌকিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলা সম্পর্কে জানতে সামরিক বাহিনীর মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পক্ষ থেকে কোন জবাব পাওয়া যায়নি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, শনিবারের বিভিন্ন ঘটনায় নিহতের সংখ্যা মিলিয়ে অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত বেসামরিক লোকের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে।
ক্ষমতাচ্যুত আইনপ্রণেতাদের জান্তা বিরোধী গ্রুপ সিআরপিএইচ এর মুখপাত্র ডা. সাসা একটি অনলাইন ফোরামকে বলেছেন, আজকের দিনটি শসস্ত্রবাহিনীর জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। তিনি বলেন, নিরাপরাধ নাগরিককে হত্যা করে সামরিক বাহিনীর জেনারেলরা আজ শসস্ত্রবাহিনী দিবস পালন করছেন।