ইউরোপে বাড়ছে কোভিড-১৯
আয়ারল্যান্ড, ওয়েলসে ফের লকডাউন
বিআই ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে সোমবার বন্ধ রেস্টুরেন্টের পাশ দিয়ে এক ব্যক্তিকে হেঁটে যেতে দেখা যাচ্ছে। ছবি এপি
বিআই ডেস্ক
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং অঞ্চলে নতুন করে বিধি নিষেধ জোড়দার করা হয়েছে। এর মধ্যে ওয়েলসে ১৪ দিনের পুরোপুরি লকডাউন, আয়ারল্যান্ডে ছয় সপ্তাহের জন্য ‘বাড়িতে থাকার’ নির্দেশ এবং নতুন করে করোনা সুনামির আশঙ্কায় বেলজিয়ামে এক মাসের জন্য বার এবং রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উত্তর গোলার্ধের বিভিন্ন দেশ করোনা আক্রান্তদের সঠিক ভাবে কোয়ারেনটাইনে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে বলে সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অভিযোগ তোলার পর ইউরোপে এ পদক্ষেপ নেয়া হলো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে গত সপ্তাহে ইউরোপের ৪৮টি দেশের মধ্যে অর্ধেক দেশে করোনা আক্রান্তের হার ৫০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে এ মহাদেশ জোড়ালো ভাবে কোভিড ১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের মুখোমুখি হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ওয়েলস এবং আয়ারল্যান্ড ফের লকডাউন ঘোষণা করেছে। কিছু কিছু দেশ আবার কারফিউও ঘোষণা করেছে।
আইরিশ প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন সোমবার এক টেলিভিশন ভাষণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয় এমন দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি হোটেল রেস্টুরেন্টে জনসমাগম না করে আগ্রহী ক্রেতাদের খাবার কিনে বাসায় নেয়ার পাশপাশি লোকজনকে নিজের বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে ভ্রমন না করার পরামর্শ দিয়েছেন। যাতায়াত ও ভ্রমনের এসব নিষেধাজ্ঞা বুধবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর হবে। মার্টিন বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার জোড়ালো প্রমান থাকায় এসব কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী।
ওয়েলসে ফার্স্ট মিনিস্টার মার্ক ড্রেকফোর্ড বলেছেন, কোভিড ১৯ এর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় তিনি কঠোর পদক্ষেপ নেয়াকে সমর্থন করছেন। সেই সঙ্গে তিনি ঘো্ষণা করেন স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে দুসপ্তাহের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয় এমন দোকানসহ অবকাশ যাপনকেন্দ্র, অতিথিশালা এবং পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ থাকবে। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় মার্চে যুক্তরাজ্য জুড়ে এ ধরণের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।
বেলজিয়ামে গত এক সপ্তাহের মধ্যেই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০০ ভাগে উন্নীত হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী রাজধানী ব্রাসেলস এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলের করোনা পরিস্থিতিকে ‘ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন। আরটিএলকে তিনি বলেন, ইউরোপে আক্রান্তদের মধ্যে আমাদের অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। সত্যিকার অর্থে আমরা একেবারে সুনামির কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, করোনার নতুন এ সংক্রমণ স্বাস্থ্যখাতকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজেজ প্রিভেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে গত সপ্তাহে বেলজিয়ামে দৈনিক গড়ে ৭,৮৭৬ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার একদিনই সেখানে ১২,০৫১ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে প্রাপ্ত তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
এশিয়ার দেশগুলোকে অনুসরণের পরামর্শ: এদিকে জেনেভাতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার জরুরী অবস্থা বিষয়ক পরিচালক মাইকেল রায়ান এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে করোনা ভাইরাস রোধে এশিয়ার দেশগুলোর উদাহরন অনুসরণ করতে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যিনিই আসবেন, তাকেই কোয়ারেনটাইনে রাখতে হবে। তিনি বলেন, সঠিক ভাবে এ পন্থা অনুসরণ করা হয় বলে আমার মনে হয় না। আর এ কারণেই আমাদের এখানে আক্রান্তের সংখ্যা এতো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিধিনিষেধ ঠিক মতো অনুসরণ করা হয় বলেই এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে করোনার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
সূত্র: আল জাজিরা