‘আনফিট’ গণ্য হবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (৮ জানুয়ারি): হোয়াইট হাউসের ক্ষমতা থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরিয়ে দেয়ার দাবি যুক্তরাষ্ট্রে এখন ক্রমেই জোড়দার হচ্ছে। কংগ্রেসের ক্যাপিটাল বিল্ডিংয়ে সমর্থকদের হামলা চালানোর পর ট্রাম্পের নিষ্ক্রিয়তার প্রেক্ষিতেই মূলত জোরালো হচ্ছে এ দাবি।
ওই হামলার সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছেন এমন বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে এবিসি নিউজ জানিয়েছে, ট্রাম্পের ক্যাবিনেটের কিছু সদস্য এখন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর ৪ নং ধারা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করছেন। এদিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ’আনফিট’ ঘোষণা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে দায়িত্ব নেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বেশ কয়েকজন সদস্য।
কংগ্রেসের জুডিশিয়ারি কমিটির সব সদস্যের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেখিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি মানষিক ভাবে ঠিক নন। তিনি এখনো ২০২০ সালের নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং এর ফলাফল মেনে নিতে পারছেন না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারো প্রমাণ করেছেন যে, তিনি আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা এবং তার দায়িত্ব অব্যাহত রাখতে ইচ্ছুক নন।
ওয়াশিংটন পোস্টের এডিটোরিয়াল বোর্ডও ট্রাম্পকে সরিয়ে দেয়ার আহবান জানিয়েছে। তারা বলেছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যতক্ষণ এ বিশাল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছেন, সেই প্রতিটি সেকেন্ডই আমাদের জনশৃংখলা এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
একই মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে মায়ামি হেরাল্ডের বক্তব্যেও। এক সম্পাদকীয়তে পত্রিকাটি বলেছে, তার বক্তব্য উন্মত্ত সমর্থকদের খেপিয়ে তোলার পাগলা ঘণ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ যেন পুরোদমে লড়াইয়ের হুঙ্কার। অ-আমেরিকান এবং গণতন্ত্র বিরোধী কর্মকান্ডের মাধ্যমে ট্রাম্প ক্যাপিটালে এমন ভাবে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছেন যেন তিনি নিজেই প্রতিটা ক্ষণ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
হামলাকারীদের ’ভেরি স্পেশাল’ বলেছেন ট্রাম্প: ক্যাপিটাল বিল্ডিংয়ে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার ফলে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে তান্ডব চালানোর পরপরই হোয়াইট হাউসের বাইরে ট্রাম্প সমর্থকরা জড়ো হয়েছিলেন। সেখান বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী অন্ধ সমর্থকদের ট্রাম্প ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি সমর্থকদের ভেরি স্পেশাল বলে অভিহিত করে বাড়ি ফিরে যাবার আহবান জানান। সেখানে তিনি আবারো বলেন, যে নির্বাচনের ফল তার কাছ থেকে চুরি করা হয়েছে।
ফুল সার্কেল স্ট্র্যাটেজিসের প্রতিষ্ঠাতা এবং রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ জোটাকা এডি ট্রাম্পের এ কর্মকান্ড সম্পর্কে বলেন, ট্রাম্পের কর্মকান্ড সত্যিকার অর্থেই তার মানষিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তার ক্ষমতার আর মাত্র দু সপ্তাহ বাকী থাকলেও দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান রক্ষায় তাকে প্রতিহত করতে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থাই নেয়া উচিৎ। তিনি বলেন, ট্রাম্প দেশে সহিংসতাকে উস্কে দিয়েছেন এবং সহিংসতার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন।
ট্রাম্পকে অপসারণের দুই উপায়: ক্ষমতা থেকে প্রেসিডেন্ট টাম্পকে সরিয়ে দেয়ার এখন দুটি উপায় রয়েছে। ইমপিচমেন্ট এবং সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী কার্যকর করা। অন্যথায় ২০ জানুয়ারি বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহনের পূর্ব পর্যন্ত দায়িত্ব নিতে পারেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স।
ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ রয়েছে আর কয়েকদিন। এ সময়ে তার বিরেুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করে তা শেষ করা অসম্ভব। ফলে বিষয়টি ২৫তম সংবিধান সংশোধনীর দিকেই ইঙ্গিত করছে।
১৯৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে হত্যার পর সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী অনুমোদন করা হয়। এতে প্রেসিডেন্টের উত্তরাধিকার এবং অক্ষমতা সম্পর্কে বিধান দেয়া রয়েছে।
স্বাস্থ্যগত কারণে যেসব প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে সড়ে দাঁড়াতে হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এর আগে এ সংশোধনী ব্যবহার করা হয়েছে।
২০০২ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ কোলোনোস্কপি করার সময় প্রথমবারের মতো সংশোধনীর ৩য় ধারা ব্যবহার করে ভাইস প্রেসসিডেন্ট ডিক চেনির কাছে সাময়িক ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। পাঁচ বছর পর আবার সেই একই কোলোনোস্কপি করার সময় বুশ আবার সাময়িক ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন।
ট্রাম্পের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষই ২৫তম সংশোধনীর ৪ নম্বর ধারার কথা বলছেন। কারণ এখানে এমন পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে যখন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালনে সক্ষম নন, অথচ তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়বেন না।
চতুর্থ ধারা অনুযায়ী, ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স এবং ট্রাম্পের কেবিনেটের বেশির ভাগ সদস্যকে ঘোষণা করতে হবে যে, প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালনে সক্ষম নন। এরপর তারা তাকে সরিয়ে দেবেন।
এবিসি নিউজ বলছে, এ প্রস্তাব নিয়ে ক্যাবিনেটের আলোচনা ঠিক কতদূর গড়িয়েছে সেটা এখনো স্পষ্ট নয়।
ইউনির্ভাসিটি অব মিসৌরির সংবিধান বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক বোম্যান বলছেন, ২৫তম সংশোধনীর ইতিহাসে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সেটা করাই হয়েছিল কেবল বিশেষ পরিস্থিতিকে লক্ষ করে, যখন প্রেসিডেন্ট শাররীক বা মানষিক ভাবে অক্ষম হবেন। তিনি বলেন, এ সংশোধনী উত্থাপনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ ভাইস প্রেসিডেন্ট এমন পদক্ষেপ নেবেন না। এছাড়া ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনে অক্ষম এমন কোন জোড়ালো যুক্তিও নেই।
ঠিক এ কারণেই রাজনৈতিক বিশ্লেষক এরিক হাম বলেন, আমেরিকার গণতন্ত্র রক্ষায় ট্রাম্পের ব্যাপারে এখন কংগ্রেসের হস্তক্ষেপ করা উচিৎ। কারণ আমেরিকার গণতন্ত্র এখন মারাত্বক পরিস্থিতিতে উপনীত হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সূত্র: সংবাদ সংস্থা, আল জাজিরা