ব্রিটেনের করোনার মহামারি নিয়ন্ত্রণ এখন জনগণের হাতে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: ডেইলি মেইল
ঢাকা (৯ জানুয়ারি): ব্রিটেনের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন এখন যুক্তরাজ্যের করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রনের বিষয়টি একান্তই জনগনের হাতে। তাই জনগণের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে, তারা যেন এমন ভাবে আচরণ করেন যেন নিজের ভাই, বোন, বাবা-মা এবং কাছের প্রিয়জনকে রক্ষায় কাজ করছেন।
যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান এবং ক্রিসমাসের ছুটিতে জনসমাগমের কারণে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় সরকার এবং স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাস প্রতিহত করতে জনগণকে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন জনগণ দায়িত্বশীল আচরণ করলেই একে সহজে দমন করা সম্ভব হবে।
যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস (ওএনএস) বলছে, শুক্রবার সেখানে ৬৮,০৫৩ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। ইংল্যান্ডে প্রতি ৫০জন একজন এখন করোনায় আক্রান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। লন্ডনে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি ৩০ জনে একজন।
এ অবস্থায় সরকারের সায়েন্টিফিক গ্রুপ ফর এমার্জেন্সি (এসএজিই) এর সদস্য অধ্যাপক ক্যালুম সেমপল বলেছেন, আমি দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, এ অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পূর্ব এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কেবল বেড়েই চলেছে। ক্রিসমাসের পর ১৪ দিন পেড়িয়ে গেছে। এখন আমরা এ উৎসবে মিলেমিশে আনন্দ করার ফল দেখতে পাচ্ছি। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরো দ্রুত ছাড়াতে সক্ষম করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট।
তাই আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি অল্প সময়ের মধ্যেই আগের তুলনায় আরো অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, দুঃখজনক হচ্ছে ক্রিসমাসের উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছ করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট। তাই এ ব্যাপারে আমাদের আরো বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া উচিৎ।
ওএনএস এর তথ্যে দেখা যাচ্ছে ব্রিটেনের ১০ জনের মধ্যে চারজনই ক্রিসমাসের উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। যুক্তরজ্যের বেশিরভাগ এলাকাতেই এটা প্রায় অনুমোদিত ছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা আগেই হুশিয়ারি দিয়েছিলেন ক্রিসমাসকে ঘিরে যে কোন ধরণর জনসমাগমই বিপদের কারণ হতে পারে।
অধ্যাপক সেমপল বলেন, করোনায় আক্রান্তের হার কমিয়ে আনার পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা কমানোর জন্য কোন ম্যাজিক্যাল উপায় নেই। তিনি বলেন, এটা নিয়ন্ত্রতনের বিষয়টি এখন রয়েছে আসলে জনগণের হাতে। তাদেরকে এখন এমন আচরণ করতে হবে যেন তারা নিজের ভাই, বোন, বাবামা এবং কাছের প্রিয়জনকে রক্ষার জন্য কাজ করছেন।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ব্রিটেনের জনগণ যদি তাদের প্রিয়জনের কথা গভীর ভাবে চিন্তা করে নিয়ম মেনে চলেন, তবেই পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা সম্ভব হবে। বিজ্ঞান এবং সমাজ একসঙ্গে মিলে একে প্রতিহত করতে পারবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক সেমপলের মতোই একই কথা বলেছেন লন্ডন হাসপাতালের ডা. কেটি স্যান্ডারসন। তিনি বলেছেন, ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিসের কর্মীরা রোগীদের সেবায় যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু নতুন সংক্রমন ঠেকাতে তাদের কোনই ভূমিকা নেই। সেখানে তারা নিরুপায়। তিনি বলেন, প্রত্যেককেই নিজের জায়গা থেকে কোভিডের সংক্রমন ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ এ সংক্রমন বাড়লে হাসপাতালে চাপ বাড়বে। আর তাতে নতুন আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়বে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার এখন জনগণকে বিধিনিষেধ মানতে উদ্বুদ্ধ করতে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। জনগণকে বলা হচ্ছে আপনাদের আচরণ এখন এমন হওয়া উচিৎ যেন মনে হয় আপনি নিনেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
সরকারের সচেতনতামূলক এক বিজ্ঞাপনে ইংল্যান্ডের প্রধান স্বাস্থ্যকর্মকর্তা অধ্যাপক কিস উইটি বলেছেন, ’আরো একবার আসুন আমরা সবাই ঘরে থাকি। একান্তই যদি বাড়ির বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে মনে রাখবেন: হাত ধুয়ে নিন, মুখ ঢেকে রাখুন এবং অন্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন’।
সূত্র: স্কাই নিউজ ও ডেইলি মেইল