‘মুসলিম ব্যান’ প্রত্যাহার, থাকছেন ডাব্লিউএইচও, প্যারিস চুক্তিতে
প্রথম দিনেই ১৫ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করলেন জো বাইডেন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (২১ জানুয়ারি): যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিলেছেন জো বাইডেন। প্রথম দিনেই তিনি একে একে ১৫টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনেক সিদ্ধান্তই রাতারাতি বদলে দিলেন। বিবিসি, আল জাজিরা, ডয়েচে ভেলে।
বুধবার স্থানীয় সময় দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন বাইডেন। তার আগে মার্কিন ইতিহাসে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কমলা হ্যারিস। এরপরেই ওভাল অফিসে বসেন বাইডেন।
ওভালে বসেই ১৫টি প্রশাসনিক নির্দেশে সই করেন জো বাইডেন। এর মধ্যে রয়েছে তথাকথিত ‘মুসলিম ব্যান’ প্রত্যাহার, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে নতুন করে যোগ দেওয়ার নির্দেশ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার প্রক্রিয়ার অবসান ঘটানো। জো বাইডেনের সহযোগিরা আগেই জানিয়ে ছিলেন, ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের যে ভয়াবহ ক্ষতি করেছে সেটা থেকে জো বাইডেন উল্টো পথে চলবেন।
ওভাল অফিসে বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, আসলে নষ্ট করার মতো কোন সময়ই হাতে নেই। আমি আজ যে নির্বাহী আদেশগুলো সই করতে যাচ্ছি তাতে কোভিড সংকট মোকাবেলাকে সহজ করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে আমরা এমন ভাবে মোকাবেলা করবো যা আগে কখনোই করা হয়নি। জাতিগত বৈষম্যে সমতা এবং সমাজের সুবিধা বঞ্চিত আরো অনেক বিষয় এতে রয়েছে।
করোনা মহামারি মোকাবিলায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাইডেন। অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ও আছে এসব নির্বাহী আদেশে। এ ছাড়া সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণ সংক্রান্ত বাজেটের ওপর স্থগিতাদেশ রয়েছে।
হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব নেয়ার পর জো বাইডেনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে করোনা মহামারি মোকাবেলা করা। কেননা, এতে ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে ৪০০,০০০ এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল, করোনাকে তিনি প্রথম দিকে গুরুত্ব দেননি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। বাইডেন জানিয়েছেন, করোনার সঙ্গে মোকাবিলার জন্য একটি নির্বাহী আদেশে তিনি সই করেছেন। এতে বলা হয়েছে, দেশের সব মানুষকে আগামী ১০০ দিন মাস্ক পরতে হবে। যে কোনো পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
হোয়াইট হাউসে করোনার জন্য একটি বিশেষ অফিস তৈরি করেছেন তিনি। যে অফিস গোটা দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে খবর রাখবে এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে। বাইডেন জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাতেও সদস্য হিসেবে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প এতে যুক্তরাষ্ট্রের ফান্ড বন্ধ করে দিয়ে বেড়িয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। বাইডেন বলেছেন, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজেজ এর পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফাউজি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাহী বোর্ডের মিটিংয়ে মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
৭টি মুসলিম দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন ট্রাম্প। ২০১৭ সালে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অজুহাতে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে বাইডেন জানিয়েছেন, ওই নিয়ম বন্ধ করার নির্দেশে তিনি সই করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, অভিবাসন নীতি ট্রাম্পপূর্ব সময়ে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে বিশ্বের বহু দেশ সই করেছিল। এই মুহূর্তে ১৮৯টি দেশ এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ এই জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন। যা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে রীতিমতো আলোড়ন হয়েছিল। ক্ষমতায় এসেই সেই চুক্তিতে ফের যোগ দেওয়ার ঘোষণা করেন বাইডেন। শুধু তাই নয়, বাইডেন জানিয়েছেন, পরিবেশ নিয়ে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেবে যুক্তরাষ্ট্র।
মেক্সিকোর সীমান্তে দেওয়াল তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ট্রাম্প। তার অন্যতম স্বপ্নের প্রকল্প ছিল সীমান্তে দেওয়াল। এই ইস্যুতে উত্তপ্ত ছিল মার্কিন রাজনীতি। মেক্সিকান সীমান্তে অভিবাসীদের ঢল ও তাদের ওপর কঠোর আচরণের কারণে বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হয়েছিলেন ট্রাম্প।
এই ইস্যুতে অটল থেকে ইমার্জেন্সি ডিক্লারেশন দিয়েছিলেন ট্রাম্প। যাতে সীমান্ত প্রাচীর তোলার বাজেট আটকে না থাকে। বাইডেন সেই ডিক্লারেশন বাতিল করেছেন।