মায়ানমারকে ‘ভয়াবহ পরিণতি’র হুশিয়ারি জাতিসংঘের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (১৬ ফেব্রুয়ারি): গণতান্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিলে মায়ানমারের সামরিক বাহিনী কে ‘ভয়াবহ পরিণতি’ ভোগ করতে হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘ। সোমবার সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা সোয়ে উইনকে ফোনালাপে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিনা শানার বার্জেনা এই হুঁশিয়ারি দেন।
জাতিসংঘ সদরদপ্তরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে যেন অবশ্যই পুরোপুরি সম্মান করা হয় এবং বিক্ষোভকারীদের প্রতিহিংসার শিকার যেন না করা হয় তা নিশ্চিত করতে চাপ দেন তিনি (শানার)।’
মুখপাত্র বলেন, ‘মায়ানমারের সামরিক বাহিনীকে শানার বলেন, বিশ্ব নিবিড়ভাবে (পরিস্থিতি) পর্যবেক্ষণ করছে এবং কঠোর কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো হলে পরিণতি মারাত্মক হতে পারে।’
ফোনালাপ সম্পর্কে সোয়ে উইন জাতিসংঘের দূতের সঙ্গে প্রশাসনের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন এবং তাকে ‘মায়ানমারের যা ঘটছে সেই সত্যিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে’ তথ্য দিয়েছেন বলে মায়ানমারের সেনাবাহিনী জানিয়েছে।
এদিকে দ্বিতীয় রাতের মতো সোমবার রাতে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার পর মঙ্গলবার সকালে সেটা আবার চালু করা হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিনা আরো বলেছেন, ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা গণতন্ত্রের মূল নীতিকে উপেক্ষা করছে।
গণতন্ত্রের দাবিতে মঙ্গলবার সকালেও জনগণ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরকে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিতে ইয়াঙ্গুনে সমবেত হওয়ার আহবান জানিয়েছে।
এর আগে সামরিক কর্তৃপক্ষ অভ্যুত্থানকারী নেতৃবৃন্দের বিরোধীতাকারীকে কঠোর সাজার সম্মুখীন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যে কোন ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য (লিখিত বা মৌখিক), কোন ধরণের সংকেত বা চিহ্ন ব্যবহারকারী কাউকে পাওয়া গেলে দীর্ঘ দিনের কারাদণ্ড এবং জরিমানার হুঁশিয়ারি দিয়েছে জান্তা।
সামরিক বাহিনী সোমবার তাদের ওয়েবসাইটে দেয়া বিবৃতিতে বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্ব পালনে বাধাদানকারীর ২০ বছর পর্যন্ত করাদণ্ড, আর জনমনে শংকা এবং অস্থিরতা সৃষ্টিকারীকে তিন থেকে সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে।
সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনাকে ‘ক্যু’ বলে উল্লেখ না করার জন্যও সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।
এদিকে শনিবার সামরিক বাহিনী কোন আদালতের নির্দেশ ছাড়াই তল্লাসি অভিযান এবং ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় কাউকে আটক রাখার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে।
এ পরিস্থিতে কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানো হচ্ছে। এসব স্থানে পুলিশের পরিবর্তে সেনাসদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে।
ইয়াঙ্গুনে সোমবার দিনের ব্যস্ততম সময়ে আট চাকার সাঁজোয়া যান দেখা গেছে। ব্যস্ত রাস্তার যানবাহন এ সাঁজোয়া যান দেখে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে অনেক সময় হর্ন বাজিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সোমবার আয়োজিত বিক্ষোভের মূল লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভবন, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনা দুতাবাস এবং সুচির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নগর সদর দফতর।
মধ্যাঞ্চলের মান্দালয়েও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। সেখানে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনী রাবার বুলেট ছুড়েছে বলে জানা গেছে।
রাজধানী নেপিডোতেও ছাত্ররা বিক্ষোভ করেছে। অনেককে সেখান থেকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। পরে অবশ্য তাদেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।