নিজ দেশের হ্যাকারদের কবলে মায়ানমার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (১৮ ফেব্রুয়ারি): মায়ানমারের হ্যাকাররা এবার সরকারি ওয়েবসাইটগুলোকে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছেন। ইন্টারনেট বন্ধ এবং সামাজিক মাধ্যম ব্লকের প্রতিবাদের অংশ হিসেবে অনলাইন লড়াইয়ে তারা এ পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
মায়ানমার হ্যাকার্স নামে একটি গ্রুপ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত প্রচারণা সংস্থা ট্রু নিউজ ইনফরমেশন টিম এবং রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত এমআরটিভির ওয়েবসাইটে হানা দিয়েছে। জান্তা সরকারের কার্যক্রমে ব্যঘাত ঘটাতে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে মায়ানমার হ্যাকার্স এভাবে তাদের কাজ শুরু করেছে।
ফেসবুক পেজে মায়ানমার হ্যাকার্স বলেছে, আমরা মায়ানমারে ন্যায় বিচারের জন্য লড়াই করছি। আমাদের এ লড়াই সরকারি ওয়েবসাইটের সামনে গণবিক্ষোভের সামিল।
১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী মায়ানমারের ক্ষমতা দখলের পর বুধবার বিভিন্ন স্থানে আায়োজিত প্রতিবাদ বিক্ষোভকে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ সমাবেশ বলে মনে করা হচ্ছে। বুধবারের এ সমাবেশের পরই হ্যাকার গ্রুপ অনলাইনের তাদের প্রতিবাদ শুরু করে।
নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে বুধবারের প্রতিবাদে গাড়ি চালকরা নগরীরর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গাড়ির বনেট খুলে রেখে প্রতিবাদ শুরু করে। তাদের সঙ্গে যোগ দিতে রাস্তায় নেমে আসেন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারি, শিক্ষার্থী, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষক-শ্রমিকসহ আপময় জনতা।
রয়টার্স বলছে, সোমবার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালেতে রেলকর্মীরা রেল চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। কিন্তু সন্ধ্যায় তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তাবাহিনী গুলি ছোড়ে। এতে একজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই অং সান সুচি গৃহবন্দি রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে আমদানি করা ওয়াকি টকি ব্যবহারসহ দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে। মঙ্গলবার তাকে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে আদালতের শুনানিতে অংশ নিতে দেখা গেছে। যদি দোষী সাবাস্ত হন, তাহলে তিনি ভবিষ্যতে মায়ানমারে আর কোন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
যে কোন ধরনের সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সামরিক কর্তৃপক্ষ অসহযোগ আন্দোলন প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। গেল কয়েকদিনে সমাবেশে অংশ নেয়ার অভিযোগে প্রায় ৫০০ জনকে কর্তৃপক্ষ আটক করেছে। সাধারণ জনতাকে অসহযোগ আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগে অভিনেতা, শিল্পী এবং চলচ্চিত্র পরিচালকসহ ছয় তারকার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হতে পারে।
সামরিক কর্তৃপক্ষ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরকে কাজে ফেরার আহবান জানিয়েছে। যারা এ নির্দেশ অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন জনবিক্ষোভ কমে আসছে। বেশীরভাগ জনতাই অভ্যুত্থানকে সমর্থন করছে। তার এ ধরনের বক্তব্য জনতাকে আরো ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এরই প্রেক্ষিতে বুধবার বড় ধরনের সমাবেশ হয়েছে। বিক্ষোভ কমে আসার কোন লক্ষণ আপাতত দেখা যায়নি।
জনবিক্ষোভকে দমন করার অংশ হিসেবে জান্তা সরকার একটি আইনের খসড়া করেছে। এতে অনেক ধরনের অনলাইন কার্যক্রমকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং ইন্টারনেটের ওপর নজরদারি আরো বাড়ানো হয়েছে।
সারা বিশ্বের ইন্টারনেটের ওপর নজরদারি করা ব্রিটেন ভিত্তিক নেটব্লকস জানিয়েছে বুধবার রাত ১টার সময় সামরিক বাহিনী আবার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছে।
বিক্ষোভ আয়োজনে ফেসবুক টুইটার সহায়ক ভূমিকা পালন করে বলে সামরিক বাহিনী এসব সামাজিক মাধ্যমও ব্লক করে দিয়েছে। অনেকে অবশ্য ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) ব্যবহার করে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কাজ করছেন। ডিজিটাল সিকিউরিটির পক্ষে কাজ করা টপ১০ভিপিএন বলেছে, ৪ ফেব্রুয়ারি মায়ানমারে ফেসবুক নিষিদ্ধ করার পর থেকে ভিপিএনের চাহিদা ৭,২০০ শতাংশ বেড়ে গেছে।
সূত্র: গার্ডিয়ান, ব্যাঙ্কক পোস্ট