আমেরিকায় নির্বাচন: কখন ফলাফল জানা যাবে
বিআই ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: বিবিসি
ঢাকা (৩ নভেম্বর): যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি জো বাইডেন, কে বিজয়ী হয়েছেন, সেটা জানতে কয়েকদিন, এমনকি কয়েক সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবারের নির্বাচনে প্রায় ১০ কোটি আমেরিকান ডাক যোগে ভোট দিয়েছেন। ফলে সব ভোট গণনা শেষ হতে দেরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাধারণত নির্বাচনের দিন রাতেই ফলাফল সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায়। অর্থাৎ এই বছর ৩ নভেম্বর রাতে নির্বাচনের ফলাফল আসতে শুরু করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আলাদা আলাদা সময়ে ভোট গ্রহণ শেষ হবে। প্রথম ভোট শেষ হবে পূর্ব উপকূলের রাজ্যগুলোয়।
নির্বাচনের রাতে সব ভোট গণনা কখনোই শেষ হয়না। তবে কে বিজয়ী হতে যাচ্ছে, সেই সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো যখন ধারণা করতে শুরু করে যে, কোন একজন প্রার্থীর আর পরাজয়ের সম্ভাবনা নেই, তখন থেকেই তারা তার নাম প্রচার করতে শুরু করে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত সব ভোট গণনা শেষ না হচ্ছে, ততক্ষণ এটা একটা পূর্বাভাস মাত্র। চূড়ান্ত ফলাফল নয়।
দেশজুড়ে বেশি ভোট পাওয়া মানেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া নয়। তাকে আসলে বেশি রাজ্যের ভোট পেতে হবে। জনসংখ্যার বিচারে প্রতিটি রাজ্যের জন্য নির্দিষ্ট ইলেকটোরাল ভোট পান ওই রাজ্যের বিজয়ী প্রার্থী। হোয়াইট হাউজে যেতে হলে প্রার্থীকে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হবে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এ বছর অনেক বেশি মানুষ ডাকযোগে অথবা ব্যক্তিগতভাবে আগাম ভোট দিয়েছেন। ডাকে পাওয়া ভোট গণনা করতে সাধারণত বেশি সময় লাগে। কারণ সেগুলোর স্বাক্ষর, ঠিকানাসহ নানা যাচাই বাছাই করতে অনেকগুলো ধাপ পার হয়ে যেতে হয়। ফ্লোরিডা এবং ওহাইয়োর মতো কয়েকটি রাজ্য এসব প্রক্রিয়া নির্বাচনের সপ্তাহ খানেক আগে থেকে শুরু করে, যাতে ভোটগুলো গণনার কাজ শেষ হয়ে যায়। এসব রাজ্যে নির্বাচনের রাতেই বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা সম্ভব হতে পারে, যদিও সেটা নির্ভর করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কতটা জোরালো হয়, তার ওপরে। কিন্তু পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিনের মতো অনেক রাজ্যে নির্বাচনের দিনের আগে আগাম ভোটের গণনা করা হয় না। এসব রাজ্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে ভোট গণনা শেষ হতে কয়েকদিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
এখানেও দুইটি বিষয় রয়েছে। যেসব রাজ্যে নির্বাচনের দিন ডাকে পাওয়া ভোট গণনা করা হবে, সেখানে প্রাথমিক তথ্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে যেতে পারে, কারণ বেশিরভাগ রিপাবলিকান নির্বাচনের দিন ভোট দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব ভোট দ্রুত গণনা করা সম্ভব। যেসব রাজ্য আগে থেকেই আগাম ভোট গণনা সম্পন্ন করে রেখেছে, তাদের প্রাথমিক ফলাফল জো বাইডেনের পক্ষে যেতে পারে। কারণ বেশিরভাগ রেজিস্টার্ড ডেমোক্র্যাট আগাম ভোট দিয়েছেন। এ কারণেই নির্বাচনী কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, আগাম ফলাফলে পুরো চিত্রটি নাও বেরিয়ে আসতে পারে।
সময় লাগার আরো কারণ আছে। 'ইলেকশন ডে' তেসরা নভেম্বর হলেও এর পরের কয়েকদিন পর্যন্ত অধিকাংশ অঙ্গরাজ্য পোস্টাল ব্যালট গ্রহণ করবে। তবে সেসব ব্যালটে অবশ্যই তেসরা নভেম্বরের সিল থাকতে হবে। সুতরাং নির্বাচনের বেশ কয়েকদিন পর পর্যন্ত ভোট আসতে পারে এবং গণনা চলতে থাকবে। আবার প্রভিশনাল ব্যালট বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। অর্থাৎ অনেকে হয়তো পোস্টাল ব্যালট চেয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে ভোট কেন্দ্রে হাজির হয়ে ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু এসব ভোট তাৎক্ষণিকভাবে গণনায় আসবে না। কারণ এসব ভোট যাচাই-বাছাই করতে হবে। কেউ দুইবার ভোট দেননি - এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে।
ভোটের সময় লাখ লাখ মানুষ ভোট দিতে আসেন। তবে অন্য সময়ের তুলনায় এবার ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা কম। করোনাভাইরাসের কারণে নির্বাচনী কর্মীদের সংখ্যাও অনেক কম রয়েছে। ফলে ভোট কেন্দ্রের বাইরে লম্বা লাইন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ক্রুটিপূর্ণ ভোটিং মেশিনের কারণেও দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হতে পারে।
বেশিরভাগ ভোট- কাগজেই হোক বা ডিজিটাল- যন্ত্রের মাধ্যমে গণনা করা হয়। তবে কোন কাগজের ব্যালট পরীক্ষা করতে যন্ত্র ব্যর্থ হলে নির্বাচনী কর্মীদের সেগুলো পরীক্ষা করে দেখতে হয়। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর ভোটের সকল তথ্য কেন্দ্রীয় নির্বাচনী দপ্তরে চলে যায়। সাধারণত সেটা সিটি হল বা এরকম কোন স্থান হয়ে থাকে। অনেক স্থানে এটা ইলেকট্রনিক্যালি হয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগ স্থানে মেমোরি ডিভাইসের মাধ্যমে ভোটের তথ্য স্থানান্তর করা হয় অথবা টেলিফোনে পড়ে শোনানো হয়। ভোটের তথ্য যাচাই করার পরেই অনেক সময় সেগুলো রাজ্যের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। আবার এসব তথ্য সাংবাদিকদের জানান নির্বাচনী কর্মকর্তারা এবং তারা সেই ফলাফল প্রকাশ করে থাকেন।
যখন কোন একটি রাজ্য জুড়ে কোন এক প্রার্থী নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান, তখন ওই প্রার্থীকে ওই রাজ্যের বিজয়ী বলে ঘোষণা করা হয়। তবে এই ফলাফল তখন আনুষ্ঠানিক বলে গণ্য করা হবে, যখন কয়েক সপ্তাহ পরে নির্বাচনী কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সেটি ঘোষণা করবেন। প্রাথমিক গণনার সঙ্গে চূড়ান্ত ফলাফলে পার্থক্য দেখা দিতে পারে, তবে সেটা সাধারণত খুব বেশি হয় না।
করোনাভাইরাস মহামারীর জের ধরে এই নির্বাচনকে ঘিরে এর মধ্যেই ৪৪টি অঙ্গরাজ্যে ৩০০টির বেশি মামলা হয়েছে। আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের পর ডাক যোগে দেয়া ভোটের পরিচয় শনাক্ত থেকে শুরু করে, কোভিডের কারণে নির্বাচনী ব্যবস্থায় পরিবর্তন- সব কিছু নিয়েই আইনি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর মধ্যেই বলেছেন যে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত হতে পারে সুপ্রিম কোর্টে।