কে হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট
বিআই ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: বিজনেস ইনসাইডার
ঢাকা ৪ অক্টোবর: নানা প্রক্রিয়া এবং পন্থা অনুসরণের মাধ্যমে অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহন শেষ হয়েছে। ভোট শেষে এর পূর্ণাঙ্গ ফলাফল পেতে কয়েকদিন সময় লাগলেও রাতেই কে জিতছেন সেটার আভাস সাধারণত ভোটাররা পেয়ে যান। কিন্তু এবার এখনো বলা যাচ্ছে না কে হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোটের লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন পেয়েছেন ২৩৮টি আর রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প ২১৩টি। তাদের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে ব্যাটলগ্রাউণ্ড খ্যাত পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিনে। পূর্ণাঙ্গ ফল জানতে কয়েকদিন সময়ও লাগবে। কিন্তু এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেকে বিজয়ী দাবি করে ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে সুপ্রীম কোর্টে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ট্রাম্পের এ ধরণের হুমকি স্বভাবসুলভ হলেও আমেরিকান রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে একেবারেই বেমানান।
এর আগে বাইডেনও বলেছেন, তিনি বিজয়ের পথে রয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বাইডেন যেসব রাজ্যে জয় পাবার কথা সেব রাজ্যে তারা তাদের আশানুরুপ ফল পেয়েছেন। যে সব রাজ্যে দুজনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে সেসব রাজ্যে পোস্টাল ভোট গণনা এখনো শুরুই করা হয়নি। এসব ভোট নির্বাচনের ফলাফল পুরোপুরি পাল্টে দিতে পারে। অনেক রাজ্যে এখনো ভোট গণনা চলছে এবং অনেকগুলো সুইং স্টেটে এখনো ফল ঘোষণা করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পরবর্তী সার্বিক পরিস্থিতি এখন সবাইকে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে।
নির্বাচনের আগে বিভিন্ন পোলে যে আভাস পাওয়া গেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেটা উপেক্ষা করে বেশ ভাল ভোট পেয়েছেন। অনেক রাজ্যেই তিনি পপুলার ভোটে বাইডেনের চেয়ে এগিয়ে আছেন। ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকার ভোটাররা সারা দেশের চেয়ে তাদের রাজ্যের সার্বিক বিষয় বেশি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে থাকেন। আর এক্ষেত্রে বেড়ে যায় ইলেকট্ররাল কলেজের গুরুত্ব। ৫৩৮ টি ইলেকট্ররাল ভোটের মধ্যে যিনি ২৭০ ভোট পাবেন তিনিই যাবেন হোয়াইট হাউসে।
এবারের নির্বাচনের লড়াইয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত ফ্লোরিডা। এখানে বাইডেন আগে থেকেই কোণঠাসা। এখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই জয়লাভ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলাফল পেলে তিনি জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে যাবেন। আরেক গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য টেক্সাসেও ট্রাম্প জয়ী হবেন বলে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ রাজ্যের ব্যাপার বাইডেন বেশ আশাবাদী হয়ে প্রচারণা চালালেও নির্বাচনের ফল তাকে হতাশ করেছে। তবে কনজারভেটিভদের জন্য একসময় নির্ভরযোগ্য রাজ্য হিসেবে পরিচিত অ্যারিজোনা বাইডেন ছিনিয়ে নিতে পারেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ১৯৯৬ সালের পর এখানে কোন রিপালিকান প্রার্থী জিতে পারেনি। ফক্স নিউজ এবং এসোসিয়েটেড প্রেস পূর্বাভাস দিয়েছে বাইডেন অ্যারিজোনায় জয় পেতে যাচ্ছেন। আর সিবিএস নিউজও আভাস দিয়েছে অ্যারিজোনার জয় ডেমোক্র্যাটদের ঝুলিতেই যাবে। রিপাবলিকানদের এক সময়ের নিরাপদ ঘাটি এ রাজ্যে পরাজয় হোয়াইট হাউসের পথে ট্রাম্পের জন্য এক বড় বাধা হিসেবে কাজ করবে।
চার বছর আগে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে যাবার জন্য যে তিন রাজ্য সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল সেই পেনসালভেনিয়া, মিশিগান এবং উইসকনসিনও এবার পিছলে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। পরাজয় প্রতিহত করতে পেনসালভেনিয়াকে ট্রাম্পের জন্য অত্যন্ত ক্রুশিয়াল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। জর্জিয়া এবং নর্থ ক্যারেলাইনার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যেও ট্রাম্পের জেতার সম্ভাবনা ৫০/৫০। বিবিসি আভাস দিয়েছে ট্রাম্প ওহাইয়ো ও মিশোরিতে জয়লাভ করবেন। এছাড়া বেশ ক্রুশিয়াল বলে চিহ্নিত নেব্রাসকাতেও ট্রাম্প জয়ী হবে বলে বিবিসি আভাস দিয়েছে। এছাড়া আর কোন রাজ্যে থেকে কোন ধরণের আকস্মিক ফল আসার কথা বলা যাচ্ছে না।
মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক ভোটের আগে প্রায় ১০ কোটি ভোটার অগ্রীম ভোট দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে ১০০ বছরের মধ্যে এই প্রথম আগেই এতো ভোট পড়েছে। সার্বিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে নির্বাচনের পুরো লড়াই অবশেষে পোস্টাল ভোটের ওপর নির্ভর হয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে আইনি জটিলতাও তৈরী হতে পারে। সে আভাস ইতোমধ্যেই ট্রাম্প দিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করার হুমকি দিয়েছেন। এর মানে হলো এর নিষ্পত্তি হতে সময় লাগতে পারে কয়েক সপ্তাহ। এতে আইনজীবীরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। শেষপর্যন্ত ফলাফল আদালতে গড়ালে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি অনিশ্চয়তা থেকে সহিংসতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসিসহ বিভিন্ন জায়গায় ট্রাম্প বিরোধী প্রতিবাদ দেখা গেছে। অনেক আমেরিকান তাদের উদ্বেগের কথা বলছেন তারপরেও বড় ধরণের কোনো সহিংসতার দিকে যাবে কিনা পরিস্থিতি তা বলার মতো যথেষ্ট সময় এখনো আসেনি।
তবে এটি পরিষ্কার যে নির্বাচনের পরও যুক্তরাষ্ট্র এখনো একটি চরম বিভক্ত জাতি হিসেবেই থাকছে। আমেরিকান ভোটাররা একদিকে ট্রাম্পকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যানও করেননি, আবার তার আশানুযায়ী ব্যাপক কোন সমর্থনও তিনি পাননি। এই নির্বাচনে যেই জয়ী হোন না কেন, রাজনৈতিক লড়াই চলতেই থাকবে।
সূত্র: বিবিসি, সিএনএন, দি ইনডিপেনডেন্ট