দিওয়ালি উৎসব ঘিরে ভারতে ই-কমার্সে কেনাকাটার লড়াই
বিআই ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
বিআই ডেস্ক
ভারতে দিওয়ালি উৎসবকে ঘিরে ই-কমার্স মার্কেটে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতার লড়াই। এক্ষেত্রে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি ওয়ালমার্টের মালিকানাধীন ফ্লিপকার্ট এবং অ্যামাজন তাদের ‘বিগ বিলিয়ন ডেস’এবং ‘গ্রেট ইনডিয়ান ফেস্টিভাল’নামে নিজেদের কর্মসূচির মাধ্যমে বাজার দখলে নেমেছে। বাজার দখলের এ দৌড়ে মুকেশ আম্বানির জিওমার্টও পিছিয়ে নেই।
ভারতের মার্কেট রিসার্চ ফার্ম ফরেস্টারের সিনিয়র বিশ্লেষক সতিশ মীনা বলছেন, দিওয়ালিকে কেন্দ্র করে ভারতে যে কেনাকাটা করা হয় সেটা বিভিন্ন কোম্পানির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারন এ সময়ে অনেকেই কেনাকাটায় বিপুল অর্থ ব্যয় করেন। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এ বছরটা বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতের লাখ লাখ ক্রেতা এখনো শশরীরে দোকানে গিয়ে কেনাকাটা করা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। তাই এ বছর ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে কেনাকাটার পরিমান ৩৪ ভাগ বেড়ে ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার দাঁড়াতে পারে বলে সতিশ মীনা ধারণা করছেন।
দিওয়ালি উৎসবে ফ্লিপকার্ট: ফরেস্টারের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ২০১৮ সালে ফ্লিপকার্ট ছিল ভারতের একক বৃহৎ অনলাইন রিটেইলার। মার্কেটে তাদের শেয়ারের পরিমান ছিল ৩১ দশমিক ৯ ভাগ। ২০১৮ সালে এ দেশি কোম্পানিকে ওয়ালমার্ট ১৬ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়। ‘বিগ বিলিয়ন ডেজ’শিরোনামে ফ্লিপকার্টের মৌসুমি কেনাকাটার আয়োজন শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। ফ্লিপকার্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজনেশ কুমার জানান, ভারতের ছোট ছোট শহর গুলোতে বিপুল সংখ্যক মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্য ক্রেতাকে লক্ষ করে ফ্লিপকার্ট সুলভ মূল্যে পন্য বিক্রির কৌশল নিয়েছে। তিনি বলেন, বেশির ভাগ ক্রেতাই পণ্য কেনার ক্ষেত্রে অর্থের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চান। এক্ষেত্রে ক্রেতাকে সঠিক দামে সঠিক পণ্য দিতে পারলেই বাজার যুদ্ধে আপনি জয়ী হবেন।
এদিকে অ্যামাজনও ভারতের ই-কমার্স মার্কেটে বেশ শক্তিশালি প্রতিদ্বন্দ্বি। এটি ফ্লিপকার্টের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও বাজারে এর শেয়ারের পরিমাণ ৩১ দশমিক ২ ভাগ। তাছাড়া সারা দেশে তাদের বেশ সুনামও রয়েছে। গত বছর টিআরএ পরিচালিত বার্ষিক জড়িপে দেখা গেছে ভারতের সবচেয়ে আস্থাবান অনলাইন রিটেইলার হচ্ছে আমেরিকান ব্র্যান্ড অ্যামাজন। টিআরএ জানিয়েছিল ভারতের অনলাইন ক্রেতারা ফ্লিপকার্টের চেয়ে অ্যামাজনের ওপর ১০গুন বেশি আস্থাশীল।
রিসার্চ ফার্ম সিএমআরের ইন্ডাস্ট্রি ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের প্রধান প্রভু রাম বলেন, ই-কমার্সের লড়াইয়ে পণ্যসেবা, সহজ লভ্যতা এবং কাস্টমারদের আস্থা অর্জনে ফ্লিপকার্ট এবং অ্যামাজনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। প্রভু রামের বক্তব্যের সঙ্গে ফরেস্টারের মীনা একমত পোষণ করে বলেন, এ লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত অবশ্য স্পষ্টত কেউ জয়ী হতে পারেনি। তবে তিনি বলেন, যে কোন উৎসবের সময় ফ্লিপকার্টের বিক্রি অনেক বেড়ে যায়। এর কারণ হচ্ছে অনলাইনে ফ্যাশনাবল পণ্য বিক্রিতে ফ্লিপকার্ট এগিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে নামীদামী ব্রান্ডের স্মার্ট ফোন ফ্লিপকার্ট বেশ ভাল ডিসকাউন্টে ক্রেতাদের হাতে পৌছে দেয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দিওয়ালির গুরুত্ব: কোভিড ১৯ মোকাবেলায় দেশের বিভিন্ন শহরে লকডাউন কার্যকর থাকায় ফ্লিপকার্ট এবং অ্যামাজন সারা দেশে পণ্য সরবরাহে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তারা এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের চেষ্টা করছে। বিশেষ করে যে কোন উৎসবের সময় তারা নিজেদের সরবরাহ চেইন আরো উন্নত করার ক্ষেত্রে মনোযোগি হয়েছে। উৎসবের মৌসুমে অতিরিক্ত অর্ডার মোকাবেলা করতে অ্যামাজন এ মাসে ব্যাঙ্গালরে নতুন একটি ওয়্যারহাউজ খুলে ১০০,০০০ মৌসুমি কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। ফ্লিপকার্ট বলছে পণ্য অর্ডারের চাপ মোকাবেলা করতে তারা প্রয়োজনীয় সংখ্যক ওয়্যারহাউজের ব্যবস্থার পাশাপাশি ৭০,০০০ নতুন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে।
দুই কোম্পানিই একাধিক ভাষায় তাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে ক্রেতাদের জন্য সহজ বোধ্য করেছে। এ উদ্যোগ ছোটশহর এবং গ্রামীন এলাকার ক্রেতাদের টানতে সহায়ক হবে।
জিও আপাতত হুমকি নয়: ই-কমার্স বাণিজ্যের লড়াইয়ে এশিয়ার সবচেয়ে ধনী বলে বিবেচিত মুকেশ আম্বানির জিওমার্টেরও ভূমিকা রয়েছে। এ বছরের গোড়ার দিকে রিলায়েন্স ইন্ডাট্রিজ যখন দেশের শতাধিক শহরে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করে, তখন এ পদক্ষেপকে অ্যামাজন এবং ফ্লিপকার্টের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবেই মনে করা হচ্ছিল। এক্ষেত্রে জিওমার্ট বাজার দখলে উদ্যোগী হবে সেটা সহজেই অনুমেয়। জুলাইয়ে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির বার্ষিক মিটিংয়ে মুকেশ আম্বানি এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার এ বক্তব্যকে অবশ্য স্বাগত জানিয়ে ফ্লিপকার্ট বলেছে বাজারে প্রতিযোগিতা বেশি হলে সবার জন্যই ভাল।
সূত্র: সিএনএন বিজনেস