যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন: ফল ঘোষণায় বিলম্বের কারণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (৭ নভেম্বর): যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনের পর পরই পোলিং বিশেষজ্ঞরা আভাস দিয়েছিলেন বরাবরের মতো এবার নির্বাচন শেষ হবার পর রাতেই কে জিতছেন সে ব্যাপারে জানানো সম্ভব হবে না। নির্বাচন শেষ হবার পর তিন দিন পেড়িয়ে গেছে কিন্তু এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না কে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউজে। এ অবস্থায় সারা বিশ্বের মানুষের মনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ফল ঘোষণায় কেন এবার এতো দেরি হচ্ছে?
ভোট গণনা শুরুর প্রথম দিকেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে নিজেকে জয়ী ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই তিনি বিভিন্ন ভাবে ভোট কারচুপি এবং জালিয়াতি হয়েছে দাবি করে অসংলগ্ন কথা বলে আসছেন। কিন্তু তার প্রতিপক্ষ জো বাইডেন সমর্থকদের শান্ত থাকার আহবান জানিয়ে বলেছেন প্রত্যেকটি ভোটই গণণা করতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে তাতে ধৈর্য ধরা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
এবারের ভোটের ফল ঘোষণায় বিলম্বের মূল কারণ ডাকযোগে দেয়া ভোট। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে এবার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার ডাক যোগে ভোট দিয়েছেন। এসব ভোট যাচাই বাছাই এবং গণণার কারণেই নির্বাচনের ফল ঘোষণায় বিলম্ব হচ্ছে॥ যুক্তরাষ্ট্রের সিস্টেমে প্রত্যেক কাজের ক্ষেত্রে রাজ্যের নিজস্ব নিয়ম রয়েছে। ভোট গণনার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। এ অর্থ হচ্ছে কোন রাজ্য কখন এর ডাকযোগে দেয়া ভোট গণণা শুরু করবে এবং কখন শেষ করবে সেজন্য তাদের নিজস্ব টাইমলাইন এবং ডেডলাইন রয়েছে। কোন কোন রাজ্যে ভোটের দিনে আগে ডাকযোগে আসা ভোট গণণার কোন সুযোগ নেই।
ডাকযোগে দেয়া ভোট গণনার ক্ষেত্রে নর্থ ক্যারোলাইনার ডেডলাইন হচ্ছে ১০ নভেম্বর। আলাস্কার ১২ নভেম্বর এবং ওয়াশিংটনে সেটা হচ্ছে ২৩ নভেম্বর। চূরান্ত ফল ঘোষণার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন এবং আলাস্কার ভোট গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনে ডেমোক্র্যাট সমর্থন জোড়ালো আর আলাস্কায় রিপাবলিকানদের সমর্থক বেশি। এরপরও সেখানকার ভোটের ফল পেতে আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
ভোটকেন্দ্রে দেয়া ভোট গণণার চেয়ে ডাকযোগে পাঠানো ভোট গণনা করতে সময় বেশি লাগে। কারণ সেগুলো সঠিক কিনা সেটা যাচাই করতে একটা লম্বা প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এবার করোনাভাইরাসের কারণে ডাকযোগে পাঠানো ভোটের সংখ্যাও অনেক বেশি। এ ভোটের সংখ্যা প্রায় ৯৯ মিলিয়নের বেশি। বেশি ভোটের কারণে অনেক রাজ্য ডাকযোগে দেয়া ভোটের নিয়মও সংস্কার করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আগে থেকে কিছু রাজ্যে সবভোটই ডাক যোগে করা হলেও এবার এসব রাজ্যেও সঙ্গে যোগ দিয়েছে ওয়াশিংটনসহ ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাদা, নিউ জার্সি এবং ভারমন্ড। এছাড়া কারা ‘অ্যাবসেন্টি’ ভোট দিতে পারবেন সে ক্ষেত্রেও বড় ধরণের পরিবর্তন আনা হয়েছে। নিউ হ্যাম্পশায়ার এবং নিউ ইয়র্কের মতো অনেক রাজ্য ‘অ্যাবসেন্টি’ ভোটের আওতা বাড়িয়েছে। অনেক রাজ্য আবার ‘অ্যাবসেন্টি’ ভোটের ডেডলাইন পরিবর্তন বা এর নিয়ম শিথিল করেছে। কিছু রাজ্য আবার বলেছে কেবল নির্বাচনের দিনের সিল সম্বলিত ডাকযোগে পাঠানো ভোটই গণনা করা হবে। আর ভার্জিনিয়াতে ‘অ্যাবসেন্টি’ ভোটের ক্ষেত্রে কোন সাক্ষীর স্বাক্ষরও বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
অর্থাৎ এ কথায় বলতে গেলে বিভিন্ন রাজ্যে ভোটের নিয়মে রবদবদল ঘটানো হয়েছে। এর ফলে ধীর গতির কারণে সার্বিক ভাবে ফলাফল ঘোষণা বিলম্বিত হচ্ছে। তাই চূরান্ত ফল ঘোষণা করার জন্য এখন বেশ কয়েকটি রাজ্যের ফলাফলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
সূত্র: স্কাই নিউজ